ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সিনেমাকেও হার মানাবে! (ভিডিও)

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিনেমাকেও হার মানাবে! (ভিডিও)

দিগন্ত জোড়া মাঠে এক পাল গরু ঘাস খাচ্ছে। তার অদূরে রাখাল বাঁশি বাজাচ্ছেন। এ যেন গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। হ্যাঁ, ছবির মতোই জীবন ছিল কিশোরগঞ্জের রতন মিয়ার (৫৫)।

এক সময় খুব ভালো বাঁশি বাজাতে পারতেন তিনি। তার বাঁশির সুর মুগ্ধ করতো এলাকাবাসীকে। দাঁপিয়ে বেড়াতেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম। তার শৈশব, কৈশরের স্মৃতিগুলো সুন্দর। কিন্তু সেই সব স্মৃতি তিনি এখন আর স্মৃতির পাতায় আঁকাতে পারেন না।

৩০ বছর আগের ঘটনা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তিনি গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গরু বাঁধার একটা খুঁটিতে মাথায় আঘাত পান। সেখানে থেকেই শুরু। আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সামান্য আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনতার খেতাব পেয়ে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার একটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান রতন মিয়া। কিন্তু ৩০ বছর ধরে একটি ছোট্ট অন্ধকার কক্ষে বিনা চিকিৎসায় জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

রতনের চিকিৎসা নিয়ে স্বজনদের ধোঁয়াশাপূর্ণ কথা-বার্তায় এলাকাবাসী মনে করেন, পারিবারিকভাবে বৈষ্যমের শিকার হয়েছেন রতন। তাদের বক্তব্য, সম্পত্তির লোভে রতনের চিকিৎসা না করিয়ে ৩০ বছর ধরে পাগল বানিয়ে রাখা হয়েছে।

রতন মিয়ার ঘটনা জানার পর এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বলছে, রতনকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি অবহেলার কারণও খতিয়ে দেখা হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনাটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও অমার্জনীয় অপরাধ।’

রতন মিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, মাথায় আঘাত পেলে প্রাথমিক রক্তক্ষরণ, ব্যাথা এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীনও হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

স্থানীয়রা জানান, পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ষাটিয়াদী গ্রামের হাজী বাড়ীর মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে রতন মিয়া। সে মেঝো ছেলে। তার আরো দুটি ভাই আছে। ৩০ বছর আগে মাথায় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রতন। কিন্তু রতন মিয়াকে কোনো প্রকার চিকিৎসা না করিয়ে বড় ভাই ও ছোট ভাই তাকে শিকলবন্দি করে রাখেন।

পরবর্তীতে ছোট ভাইও মারা যান। এরপর বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া বাবার সব সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করতে থাকেন। বসত ঘরের বারান্দায় আরেকটি ছোট্ট ঘরে করে সেখানে রতনকে শিকলবন্দি করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রাখেন। ঘরের ভেতর একটি খুঁটির সঙ্গে তার পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়। সে ঘরেই তাকে প্রাকৃতিক কাজ করতে হয়।

নির্জন অস্বাস্থ্যকর তালাবদ্ধ ছোট্ট ঘরেই কেটেছে রতনের জীবনের মূল্যবান ৩০ বছর। সম্পদের লোভে আপন ভাই তাকে এভাবে পাগল বানিয়ে রেখেছেন বলে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন।

রতন মিয়ার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়ার দাবি, রতন মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তাকে বহুবার ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। সে কখনো পুরোপুরি সুস্থ হবে না। তবে ঢাকার কোথায়, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি আমাকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা ছাড়া কেন তাকে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান সেখানে গিয়েছেন। তাকে কীভাবে দ্রুত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। তা ছাড়া ৩০টা বছর ধরে কেন তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছিল সেটিও উদঘাটনে চেষ্টা চালাচ্ছি।’

ভিডিও :




কিশোরগঞ্জ/রুমন চক্রবর্তী/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়