ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘কোটিপতি পিয়ন’ ইয়াছিন গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘কোটিপতি পিয়ন’ ইয়াছিন গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ‘কোটিপতি পিয়ন’ ইয়াছিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ।

শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভবনের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াছিন মিয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আতুয়াকান্দি এলাকার মোহন মিয়ার ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অডিট চলাকালে কোটি টাকার ঘাপলা বেরিয়ে আসার সঙ্গে অফিসের পিয়ন (অফিস সহায়ক) ইয়াছিন মিয়ার (৪২) অনিয়ম, দুর্নীতি প্রকাশ হচ্ছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে অফিসে চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক মিতেন্দ্র নাথ শিকদার অডিট কার্যক্রম শুরু করার পর অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন পিয়ন ইয়াছিন মিয়া।

এ ঘটনায় সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ বাদী হয়ে ৩০ নভেম্বর রাতে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি হওয়ার পর পুলিশ ইয়াছিন মিয়ার খোঁজে মাঠে নামে। ইতিমধ্যে ইয়াছিন মিয়ার তিন স্ত্রীর মধ্যে দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

গত ৩০ নভেম্বর রাতে প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমকে থানায় ডেকে এনে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা বেগমকে তার পশ্চিম পাইকপাড়ার বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ইয়াছিন মিয়ার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনা ছিল টক অব দ্য টাউন।

দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ইয়াসিন মিয়ার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। জানতে পেরেছে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক। ইয়াছিন মিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল, তল্লাশি ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ চালানের টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতেন।

গত ২৬ নভেম্বর অফিসে অডিট কার্যক্রম শুরু হলে তার বিরুদ্ধে ‘কোটি টাকার ঘাপলা’ প্রকাশ পায়। এর পর গা-ঢাকা দেন ইয়াছিন মিয়া। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সোনালী ব্যাংকের ভুয়া চালান রশিদ তৈরি করে তিনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ইয়াছিনের প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ইয়াছিন মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর দুই বছর পর তিনি (ইয়াছিন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পান। তিনি জানান, তার স্বামী ইয়াছিন মিয়া তাকে (সাজেদা) পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামে চার শতাংশ জায়গার ওপর তিনতলার একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। সেই বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে তিনি তার বড় ছেলেকে ফ্রান্সে পাঠিয়েছেন।

সাজেদা জানান, তাকে বিয়ে করার ১০ বছর পর ইয়াছিন আকলিমা নামে এক বিধবাকে মেয়েসহ বিয়ে করেন। ওই মেয়ে বড় হওয়ার পর তাকে ইতালি প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ইয়াছিন মিয়া ওই মেয়ের স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে পৌর এলাকার পাইকপাড়ায় একটি ছয়তলা বাড়ি করেছেন।

আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর ইয়াছিন এক প্রবাসীর স্ত্রী মকসুরা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মকসুরাকেও বিয়ে করেন ইয়াছিন। পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ার একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানে তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন ইয়াছিন। গত ২৬ নভেম্বর অফিসের ঘাপলা প্রকাশ হওয়ার পর ইয়াছিন তৃতীয় স্ত্রী মকসুরাকে নিয়ে গা ঢাকা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজ সকালে থানা এলাকার সামনে থেকে ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার অফিসের কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া/মাইনুদ্দীন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়