ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাকসেনাদের নিষ্ঠুরতা ছিল নরসিংদী জুড়েই

নরসিংদী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাকসেনাদের নিষ্ঠুরতা ছিল নরসিংদী জুড়েই

মহান মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী হানাদার মুক্ত হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর। আর এই জেলাটি মুক্ত হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন ১১৬ জন বীর সন্তান। এরমধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭, মনোহরদীর ১২, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন।

১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করে এখনো ভয়ে আঁতকে ওঠেন নরসিংদীবাসী। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার স্বাক্ষী আছে নরসিংদী জেলাজুড়ে অনেক গণকবর। সংরক্ষণ না করায় এসব গণকবরের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যাওয়ার পথে।

নরসিংদীর এমন কোনও স্থান নেই যেখানে ৭১-এ শত্রু সেনাদের নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি। নরসিংদী সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭/২৮ জন করে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের নরসিংদীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ক্যাম্পে আটক রাখা হতো। নির্যাতন শেষে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো বর্তমান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা মোড় সংলগ্ন লোহাপুলের নীচে। সেখানে এক দলকে বসিয়ে রেখে তাদের সামনেই আরেক দলকে গুলি করে হত্যা করা হতো। হত্যা শেষে লোহারপুলের নীচে সবাইকে একসঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হতো।

মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। নরসিংদীকে ৩ নং সেক্টরের অধীনে নেয়া হলে কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মোঃ নূরুজ্জামান।

নরসিংদীকে মুক্ত করতে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধারা যে সব স্থানে যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছিলেন সে স্থান গুলো হলো, নরসিংদীর সদর উপজেলার বাঘবাড়ী, পালবাড়ী, আলগী, পাঁচদোনা, পুটিয়া, চলনদীয়া, মনোহরদী উপজেলার হাতিরদীয়া বাজার, রায়পুরা উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার,রামনগর, মেথিকান্দা, হাটুভাঙ্গা, ভাঙালীনগর, খানাবাড়ী, বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার, বড়িবাড়ী, নারায়ণপুর ও নীলকুঠি।

পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় নরসিংদীর ১৫টি বধ্যভূমিতে বিভক্ত করে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়ে ছিল। এ গুলোর মধ্যে নরসিংদী শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্চ অফিস, শ্মশানঘাট, খাটেহারা সেতু, শীলমান্দি, রায়পুরা উপজেলার পরিষদ ভবন, মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন, রামনগর, বেলাব বড়িবাড়ী, পলাশের জিনারদী রেলওয়ে স্টেশন ও শিবপুরের, ঘাসিরদিয়া, পুটিয়া উল্লেখযোগ্য।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে খেতাব ভূষিত হয়েছেন নরসিংদীর ৬ জন। তারা হলেন, ফ্লাইট লেঃ শহীদ মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ, নেভাল সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরপ্রতিক, লেঃ কর্ণেল আব্দুর রউফ বীর বিক্রম, সুবেদার খন্দকার মতিউর রহমান বীর বিক্রম, বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) এ.এস.এম নুরুজ্জামান বীর বিক্রম ও লেঃ কর্ণেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম ভূইয়া বীর বিক্রম।

নরসিংদী মুক্তদিবস উপলক্ষে আজ স্থানীয় প্রশাসন ও নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

 

নরসিংদী/ গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়