ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনা বিপদে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা বিপদে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু

সারাদেশেই রয়েছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ‌্যাতি। এই লিচুর বৈশিষ্ট হচ্ছে সুমিষ্ট স্বাদ, সুন্দর গন্ধ, টসটসে রসালো ও রঙ গাঢ় লাল।

‘মঙ্গলবাড়িয়া' কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ছোট একটি গ্রাম। গ্রামের নাম অনুসারেই লিচুর নামকরণ। মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু চাষের প্রচলন ঠিক কত বছর আগে এবং কিভাবে শুরু হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে স্থানীয়দের ধারণা অন্তত কয়েকশত বছর আগে এখানে লিচু চাষ শুরু হয়েছিল। চলতি মৌসুমেও মঙ্গলবাড়িয়া ইউনিয়নে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। হাজার হাজার লিচু গাছে থোকায় থোকায় লিচু শোভা পাচ্ছে। লিচু পাকতে শুরু করেছে, তাই চলছে ফল আহরনের কাজ। এক সপ্তাহের মাঝে সকল লিচু আহরণও শেষ হয়ে যাবে। 

প্রতিবছরই এমন সময়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। করোনার কারণে এবার সে অবস্থাটি নেই। লিচুর ভরা মৌসুমেও ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের পদচারণা তেমন একটা নেই মঙ্গলবাড়িয়ার কোন লিচু বাগানে।

অথচ প্রতিবছর এ সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের পদচারণায় মূখর থাকতো লিচু বাগান। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতো শত শত পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা। কিন্তু উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতিতে লিচুর ফলন ভাল হলেও বাইরের পাইকাররা কম আসায় ও পরিবহনের ব‌্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
 


লিচু চাষিদের ভাষ্য, প্রতি মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার। তবে এবছর বর্তমান পরিস্থিতিতে লিচুর দাম ও বিক্রি নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত।

মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বছরের পর বছর মিটিয়ে আসছে ফলপ্রেমীদের রসনা তৃপ্তি। লিচু চাষ এখনকার কৃষকের জন্যও সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। দেশ-বিদেশে লিচু বিক্রি করে অনেক চাষি উপার্জন করছেন লাখ লাখ টাকা। তবে এবছর লিচুর বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা। ‍অদৃশ‌্য করোনা পাল্টে দিচ্ছে বিগত বছরগুলোর সকল হিসেব।

লিচু চাষি রহমত মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়ায় আমার মত অনেক কৃষকেরই উপার্জনের মূল উৎস লিচু। সচ্ছল অনেক কৃষকেরই রয়েছে ২৫-৩০টি থেকে শুরু করে শতাধিক লিচু গাছ। শুধুমাত্র লিচু বিক্রি করেই চাষিরা তাদের সংসারে সচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবছর যেভাবে ভাল দামে দেশ-বিদেশে লিচু বিক্রি করেছি, এবছর করোনা পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। আমার ৪০টি গাছে ফলন ভালই হয়েছে, কিন্তু বিক্রি তেমন ভাল হচ্ছেনা।'
 


লিচুর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা কুদরত আলী বলেন, ‘প্রতিবছরই এখান থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লিচু সংগ্রহ করে আমি আশপাশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকি। এখানকার লিচু খেতেও সুস্বাদু, ঘ্রাণ সুন্দর এবং দেখতেও ভাল। প্রতি বছরই লিচু চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহন সঙ্কটে রয়েছি। একশ লিচুর থোকা সাধারণত বাজারে তিন থেকে চারশ টাকায় বিক্রি করে থাকি। তবে এবছরও দাম কতটুকু ভাল পাবো সেটা নিয়েও দুঃশ্চিন্তা রয়েছে।' 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু খুবই ভাল। প্রথমে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে ফলন ভাল হয়েছে। বর্তমানে দাম কিছুটা কম থাকলেও আগামী এক সপ্তাহের মধ‌্যে সকল লিচু আহরণ করার পর ভাল দামে বিক্রি হবে আশা করছি।'

 

কিশোরগঞ্জ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়