ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লোনা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন ৫ গ্রামের মানুষ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
লোনা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন ৫ গ্রামের মানুষ

এটি কোনো নদী বা বিল নয়, কয়রার হরিণখোলা-ঘাটাখালির একটি স্কুলের মাঠ, পাশে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা উপজেলার ৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ লোনা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন।

বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এখানকার মানুষ এখন বাঁধ মেরামতেই সময় পার করছেন।

ফলে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে খেয়ে না খেয়ে কষ্টের মধ্যেই দিন পার করতে হচ্ছে উপজেলার অধিকাংশ মানুষকে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে (পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩-১৪-২ পোল্ডার) কয়রা সদর, মহারাজপুর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ হাজার ঘরবাড়ি, সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর মাছের ঘের এবং ৫৫২ হেক্টর কৃষি জমির ফসল ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ২১ কিলোমিটার বাঁধের আংশিকসহ অভ্যন্তরীণ কাঁচাপাকা ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, ভেঙে যাওয়া খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশির গাজীপাড়া, হাজতখালি, কাটকাটার রত্নাঘেরি বেড়িবাঁধ এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারের লোনা পানিতে বসতবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর, ক্ষেতখামার ও ফসলের জমিসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে এখানকার ৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ লোনা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।

উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া এলাকার আজিজুর রহমান বলেন,  ‘রাতে থাকার মত কোন শুকনো জায়গা নেই। সারাদিন বাঁধে কাজ করতে হয়, আর রাতে ঘরে থাকার মত কোন জায়গা নেই। দুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে সকালের রান্না। সেখানে গিয়ে খেয়ে রাস্তার ওপর মাচা করে সেখানেই ঘুমিয়ে থাকি। ঈদ এবার আমাদের জন্য না।’

কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘দিনে দুইবার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছি। জোয়ারে ডুবে যায় ঘর ভাটায় জেগে ওঠে। নতুন করে বাঁধ নির্মাণ হবে আমরা নির্বিঘ্নে নিজের ঘরে থাকতে পারব এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরসহ এখানকার ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অনেক মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু মুছা জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবই তলিয়ে যাওয়ায় এখন আর মাথাগোঁজার ঠাই নেই। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের।

উত্তর বেদকাশির কাশিরহাট-গাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা গীতা রাণী সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গাজীপাড়া বেড়িবাঁধের ব্যাপক এলাকা ভেঙে তাদের ১৫ বিঘা জমির ঘের ও ফসলের জমিসহ আশপাশের আরো ৫০ বিঘা জমি কপোতাক্ষ নদে বিলীন হয়ে গেছে। লোনা পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে সর্বশেষ আশ্রয়টুকু পর্যন্ত হারানোর উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজীপাড়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন রুস্তম গাজীসহ আরো ১০/১৫টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন তারা।

স্থানীয় সনাতন সরকার জানান, হাজতখালি বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বিনয় মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, পরিতোষ মণ্ডল, হরেন মণ্ডল, গুনধর মণ্ডল, জগদীশ মণ্ডল, পরিমল বরকন্দাজ. অমল বরকন্দাজ, সুনীল বরকন্দাজ ও সাধন মণ্ডলের বসতঘর নদীগর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়েছে। কাটকাটার রত্নাঘেরি বেড়িবাঁধ মেরামত করার পর জোয়ারের চাপে পুনরায় সেটি ভেঙে গেছে।

বেড়িবাঁধ মেরামত প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ মেরামত করতে সরকার সেনা তদারকিসহ সকল ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঈদের দিন উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের স্লুইজগেট সংলগ্ন বাঁধ মেরামত শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকটি গ্রামের গ্রামের ৫ সহস্রাধিক লোক হাটু পানিতে ঈদের জামাত আদায় করেন। এ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।


খুলনা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়