ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ছে পাহাড়ি টিলা

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ৭ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ছে পাহাড়ি টিলা

হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ছে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে, আবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক রাস্তাও। এর প্রতিকারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ধসের কারণে দিন দিন টিলাগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একশ্রেণীর অসাধু লোক জেলার পাহাড়ি এলাকাখ্যাত মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ছড়া থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে ছড়ার পাশে থাকা টিলাগুলো ধসে পড়ছে। বালু উত্তোলনে ছড়াগুলো প্রশস্ত হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকার রাস্তা-ব্রিজ ও কালভার্টগুলোয় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক স্থানে ব্রিজের গোড়ার মাটি সরে যাচ্ছে। ধসে পড়ছে রাস্তার পাশগুলো।

সম্প্রতি পুরনো মহাসড়কের চুনারুঘাটের পাহাড়ি এলাকার সড়ক ও ব্রিজের গোড়ার মাটি সরে যায়। এতে এ সড়কের পাঁচটি ব্রিজ হুমকিতে রয়েছে। ব্রিজের গোড়ার মাটি সরে যাওয়ার পেছনে একটাই কারণ, তা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ছড়া থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা।

ব্রিজ, রাস্তা আর টিলা ধসের প্রতিকারের উপায় হিসেবে ছড়া থেকে অবাধে বালু উত্তোলনকে দায়ী করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় মাটির নিচে রয়েছে গ্যাস। আর মাটির ওপর উৎপাদন হচ্ছে চা, রাবার, লেবু, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য। এসব ফল, ফসল উৎপাদনে লাখ লাখ মানুষ নিয়োজিত থাকায় জীবিকার পথ তৈরি হয়েছে। সরকারও পাচ্ছে পর্যাপ্ত রাজস্ব। এর চেয়েও বড় কথা, পরিবেশ রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এসব পাহাড়-টিলা। এখানকার গাছ-গাছালির উপস্থিতি মাটি ও পাহাড়-টিলা ধস ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবাধে ছড়ার বালু তোলায় পাহাড়-টিলার গাছ-গাছালির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই গাছগুলো পাহাড়-টিলাকে ধরে রাখতে পারে না। এতে এগুলো ছড়ায় ধসে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুনারুঘাট উপজেলাধীন পাহাড়ি এলাকার এক বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় টিলায় ছোট ছোট ধস অব্যাহত রয়েছে। এমনভাবে থাকলে টিলাগুলো রক্ষা করা কঠিন হবে। এর সঙ্গে টিলায় রোপণ করা চা গাছ দিন দিন কমে যাবে। তিনি বলেন, উঁচু ঢালু স্থানের গাছে চা পাতার ভালো ফলন হয়। টিলা না থাকলে বাগানগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে। বাগান রক্ষায় টিলা ধস বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

বনগবেষক আহমদ আলী বলেন, এখানকার পাহাড়ি এলাকায় নানা ফসল হচ্ছে। এখানে গ্যাসকূপও রয়েছে। পর্যটকরা এসে এখানে সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করতে পারছেন। মুক্ত বাতাস পাওয়া যাচ্ছে। হবিগঞ্জসহ আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরাট উপকারে আসছে। তাই যে কোনো মূল্যে এখানকার টিলা আর পাহাড় রক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। কাউকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ।



হবিগঞ্জ/মামুন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়