ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একটি সেতুর অপেক্ষায় গ্রামবাসী

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০০, ১৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
একটি সেতুর অপেক্ষায় গ্রামবাসী

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুরের দক্ষিণ চরহামুয়ার বুক চিরে বয়ে গেছে খোয়াই নদী।

কিন্তু এই খোয়াই যেন এই এলাকার ২০ গ্রামের হাজারো মানুষের কাছে এক দুর্ভোগের নাম।

কারণ উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরহামুয়া গ্রামের মরহুম ফজর আলী তালুকদারের বাড়ি সংলগ্ন খোয়াই নদীর ওপরে কোনো সেতু নাই। একটি সেতুর অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পারাপার হতে হয় এই এলাকার অসহায় মানুষগুলোকে।

শুকনো মৌসুমে স্থানীয় লোকজন নিরুপায় হয়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে চলাচল করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের পর্যন্ত যাতায়াত করতে হয় এই সাঁকোর ওপর দিয়ে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রীও চলাচল করে প্রতিদিন।

কিন্তু বর্ষাকালে এখানকার দুর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণে। তখন তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পা পিছলে নদীতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ রোগীকে নিয়ে নদী পার হতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয় এখানকার মানুষের।

শুধু তাই নয়, এলাকার কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে বাজারে যাবার সময় নদী পারাপার হতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তারপরও এই এলাকার মানুষ কর্মের তাগিদে, স্বপ্ন পূরণে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিত্যদিন খোয়াই নদী পার হয়ে আসছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনেক দাবির পরেও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কেউই ওই নদীর উপরে একটি সেতু নির্মাণ করেননি। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই নদীর একটি সেতুর জন্য বিভিন্ন সময় আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবন পার করতে হচ্ছে তাদের।

ফলে কাঙ্ক্ষিত একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় আছেন নদীর দুপারের ২০ গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু এখন আর দুর্ভোগের শিকার লোকজন প্রতিশ্রুতি শুনতে চান না। চান বাস্তবে যেন দ্রুত সেতুটি নির্মাণ হয়। তবে কবে সেতুটি নির্মাণ করা হবে এ নিয়ে পথচারী গ্রামবাসীর মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ খেয়াঘাট দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন গ্রামের লোকজন রাইজিংবিডির এই প্রতিনিধিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল আহমদ বলে, ‘আমরা নদীর ওই পাড়ে স্কুলে যাই। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে অনেক ভয় লাগে। বর্ষার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে আমাদের বই-খাতা জামা ভিজে যায়। তখন আর স্কুলে যেতে পারি না। তবে এর জন্য আমাদের আর বিকল্প কোনো পথ নেই।’

লস্করপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরহামুয়া গ্রামের জালাল, আসিফ, শমশের জানান, খেয়াঘাটে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয় উভয় পাশের প্রায় ২০ গ্রামের লোকজনের। শুকনো মৌসুমে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় বিভিন্ন সময় নানা ধরণের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় এলাকাবাসীকে। এতে করে অনেকের প্রাণনাশেরও আশঙ্কা থাকে। আর বর্ষায় নদী পারাপার হতে গিয়ে প্রতিদিন শত শত লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আরো সমস্যায় পড়তে হয় এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কোনো প্রসূতিকে হাসপাতালে নিতে হলে। এমন কষ্ট আর কতোদিন?

একই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসাযী জানান, শহর থেকে ব্যবসার মালামাল আনতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। সেতু না থাকায় মালামাল বহন করতে সব সময় বেশি খরচ হয়। এছাড়া, এতে সময়ও বেশি লাগে। বর্ষায় নদীতে জোয়ার আসলে খেয়াঘাটে নৌকা পার হতে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় পথচারীদেরকে। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বার বার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে তারা আর এই সেতুর জন্য কিছু করেন না।

লস্করপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান হিরো বলেন, ‘এলাকার জনগণের সুবিধার্থে দীর্ঘদিন থেকে নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। এমপি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির মহোদয়কে এ বিষয়ে অবগত করেছি। তিনি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’

তিনি জানান, সরকারি বরাদ্দে খেয়াঘাট সংলগ্ন রাস্তায় ইট সলিং করা হয়েছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট সকল গ্রামবাসীর চলাচলের কথা চিন্তা করে সেতুটি নির্মাণের জন্য দ্রুত স্থান নির্ধারণ করা হবে। এবং অতি সত্তর নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে।

 

হবিগঞ্জ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়