ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাবে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ২৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাবে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’

কোনোভাবেই কক্সবাজারে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। রেড জোন, লকডাউন কিংবা সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরও ক্রমশ সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তাই এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পৌর এলাকায় ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে।

মাঠ পর্যায়ে এই ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ এর দায়িত্ব পালন করবে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘‘কক্সবাজার পৌর এলাকায় করোনা সংক্রমণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এটি কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। তাই প্রথমে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ এর পরিকল্পনাটি মাথায় আসে। এরপর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও পৌর আওয়ামী লীগ সবার সাথে বসে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘মাঠ পর্যায়ে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ এর কাজ করার জন্য পৌর আওয়ামী লীগের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়। যাদের কয়েকদিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। অবশেষে শুক্রবার সকাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে এই ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ টি কক্সবাজার পৌরসভায় করা হচ্ছে। এখান থেকে যদি সুফল পাওয়া যায়; তবে এটি অন্যান্য উপজেলায়ও করা হবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হবে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ম্যাপিং এর তথ্য মতে, এ নিয়ে জেলায় ৪৭ জন রোহিঙ্গাসহ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো দুই হাজার ২৮৭ জনে। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ১০৫৩ জন, রামু উপজেলার ১৯০ জন, উখিয়া উপজেলার ২৬৪ জন, টেকনাফ উপজেলার ১৯৫ জন, চকরিয়া উপজেলার ৩১১ জন, পেকুয়া উপজেলার ৯৫ জন, মহেশখালী উপজেলার ৯০ জন ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৪২ জন বাসিন্দা রয়েছে।

এছাড়াও উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা ৪৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৬১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এদের মধ্যে পাঁচ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।

ম্যাপিং এ দেখা যায়, করোনা রোগীর সংখ্যা কক্সবাজার সদর তথা কক্সবাজার পৌর এলাকায় জেলার সব উপজেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলার অন্য সাতটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা মিলে যে রোগী শনাক্ত হয়েছে তার কাছাকাছি রোগী ধরা পড়েছে কক্সবাজার সদরে। গত বুধবার পর্যন্ত কক্সবাজার সদরে করোনা রোগী সংখ্যা এক হাজার ৫৩ জন।

তাই ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ এর মাধ্যমে চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংম্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজনদের চিহ্নিত করা হবে। এজন্য রেড জোন কক্সবাজারে স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব পালককারি ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে ডাটা সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্ব দেবেন ওয়াহিদ মুরাদ সুমন ও মোহাম্মদ ফয়সাল হুদা।

এই স্বেচ্ছাসেবকদের গলায় কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া, সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসমলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জল করের স্বাক্ষর করা কার্ড থাকবে। এই কার্ড ছাড়া অন্য কেউ এই কাজে যুক্ত হতে পারবেন না।

কক্সবাজার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রধান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম জানান, ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে পাঁচ জন করে স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডাটা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে জমা দেবেন।

মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্বেচ্ছাসেবক টিম করোনা রোগী শনাক্তকরণ, নমুনা সংগ্রহের জন্য তথ্য সংগ্রহ, রোগীর আবাসন লকডাউন এবং চিকিৎসা সেবার জন্য যথাযথ স্থানে প্রেরণসহ জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।’

স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ক ওয়াহিদ মুরাদ সুমন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকরা একটি নির্দিষ্ট ফরমে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ডাটা সংগ্রহ করবেন। একই সাথে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া করোনা রোগী ও উপসর্গে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসাপত্র ও পরামর্শও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবেন। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত পরিবারে যাদের ঘরে বাজার করার মানুষ নেই; বাজারে যাওয়ার সুযোগ নেই- সেসব পরিবারের দৈনন্দিন বাজার করতেও সহযোগিতা করবেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা। তাই এই কাজে পৌর এলাকার সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে সব ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এখন নতুন করে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে ১২টি ওয়ার্ডে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা গত ৮ জুন থেকে ২০ জুন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংম্পর্শে ব্যক্তিদের ডাটা তৈরি করবেন। এই তালিকা অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তি সংম্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হবে। যে প্রক্রিয়া পৌর এলাকায় করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’


কক্সবাজার/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়