ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পশুর হাটে ভরসা নেই খামারিদের, আগেই বাড়ি থেকে বিক্রির চেষ্টা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৭ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
পশুর হাটে ভরসা নেই খামারিদের, আগেই বাড়ি থেকে বিক্রির চেষ্টা

খুলনায় কোরবানিতে বিক্রির জন্য খামারে প্রস্তুত গরু

পশুর হাটের ওপর ভরসা করতে পারছেন না খুলনার গরুর খামারিরা। হাট বসবে কি-না বা বসলেও ক্রেতারা আসবে কিনা, কেমন দাম পাওয়া যাবে, এসব দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। তাই হাটের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখন থেকেই গরু বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা।

তবে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় খামারিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে চান। দাম পেলেই কেবল গরু হাটে তুলবেন। অন্যথায় লোকসান দিয়ে তারা গরু বিক্রি করবেন না। যে কারণে সঠিক দামে আগে থেকেই বিক্রির চেষ্টা করছেন।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সূত্র জানান, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে মোট গবাদি পশু রয়েছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে গরু ৪০ হাজার ৯৬৮টি  এবং ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া এবারের কোরবানি ঈদের জন্য রাখা আছে।

সূত্র মতে, গত বছর খুলনা জেলায় খামারের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১টি এবং  কোরবানির জন্য ৫১ হাজার ২৯৪ টি পশু প্রস্তুত ছিল।

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার খামারের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ১১১টি আর গবাদিপশুর সংখ্যাও কমেছে ৬ হাজার ১০১টি।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরের মরহুম খান মোজাফ্ফর হোসেন ডেইরি ফার্মের সত্ত্বাধিকারী এরশাদ খাঁন সবুজ জানান, তার খামারে ৮০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু সংকটকালীন পরিস্থিতিতে খুব একটা লাভ না হলেও ছেড়ে দেবেন। কিন্তু লোকসানে গরু বিক্রি করতে রাজি না তিনি।

একই উপজেলার মেসার্স জামাল ডেইরি ফার্মের মালিক মো. জামাল হোসেন বলেন, পশু খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য। এছাড়া অন্যান্য খরচ মিলে গরুর লালন-পালনে ব্যয় বেড়েছে। তবে, ভারত বা মায়ানমার থেকে পশু না আসলে এবং হাটে ক্রেতা সমাগম হলে লোকসান হবে না বলে আশা করছেন তিনি।

দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুশেন হালদার জানান, এবার উপজেলায় ৫ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার গরু এবং দেড় হাজার ছাগল। উপজেলায় কোরবানিতে পশু ঘাটতি হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে হতাশা ব্যক্ত করে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়ার খামারি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটের ওপর ভরসা করতে পারছি না।’ এ সংকটময় মুহূর্তে দাম নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তিনি।

দাকোপ উপজেলার কৈলাশঞ্জের খামারি অজয় মজুমদার বলেন, তার খামারে কোরবানি দেওয়ার উপযোগী ১০টি গরু রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে পশু হাটে ক্রেতার অভাবে দাম পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়ার খামারি মো. আলতাফ হোসেন জানান, তার খামারে ১২টি দেশি গরু রয়েছে। যার মধ্যে কোরবানির উপযোগী ৫টি। কিন্তু এবছর ব্যাপারিরা অনেক কম আসছেন। ফলে দুশ্চিতা বেড়েছে।

একই উপজেলার অপর খামারি সুমন হোসেন বলেন, অনেকেই অনলাইনে গরু ক্রয়-বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু খামারির হাটে গরু নিয়ে বিক্রি না করতে পারলে তুষ্ট হয় না।
তেরখাদা এলাকার খামারি কাশেম আলী বলেন, প্রতি বছর কোরবানিতে বিক্রির উদ্দেশ্যেই গরু লাল-পালন করে ভাল দামে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এবার দামের পাশাপাশি বিক্রি নিয়েও শঙ্কায় আছি।

এদিকে খামারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে সংকটে রয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা, যারা সাধারণত একাধিক ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে করে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক বলেন, এবার করোনার কারণে পশুরহাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচা-কেনা হবে। এছাড়া অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে পশু বিক্রি নিয়ে খামারিদের খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব‌্য করেন তিনি।

 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়