ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দিন-রাত ব‌্যস্ত কামার, তারপরও বিক্রিতে হতাশ

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
দিন-রাত ব‌্যস্ত কামার, তারপরও বিক্রিতে হতাশ

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জে কামাররা। রাস্তার ধারে বা বিভিন্ন অলি-গলিতে টুং টাং শব্দের ধ্বনি পাওয়া যায় কামারশালায়। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। যেন এক মুহূর্ত দম ফেলার সময় নেই তাদের। লক্ষ‌্য একটাই কোরবানির জন‌্য ভালমানের দা, ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি তৈরি করে আয়-রোজগার বাড়ানো। আর নিজেরাও ভালভাবে ঈদ উদযাপন করা।
তবে দিন-রাত একত্র করে ক্লান্তিহীন বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করলেও বিক্রি নিয়ে হতাশায় তারা। একদিকে লোহার দাম বেশি, অন‌্যদিকে করোনার প্রভাব। জমানো পুঁজি বিনিয়োগ করে লোহা কিনে এবং শ্রম দিয়ে কোরবানি ঈদের সরঞ্জামাদি তৈরি করেছেন তারা।এখন এসব জিনিস বিক্রি নিয়ে চিন্তিত তারা।
কামারশালাগুলোতে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, করোনার প্রভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে লকডাউনের সময় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এসব কামারশালা। সেই সময়টাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে পরিবার পরিজন নিয়ে। এমনকি অনেকে ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছেন। এখন সে ধারের টাকা মিটাতে আর ব‌্যবসা চালাতে হিমশিম পেতে হচ্ছে তাদের। তাই সার্বিক দিক মিলিয়ে এবং পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ‌্যে তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। 
নরসুন্দা লেকপাড়ের পাশে কামারশালার কারিগরারা জানান, সাধারণত লোহার চাহিদা অনুযায়ি বড় দা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, ছোট দা ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বড় ছুরি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা,   ছোট ছুরি ৫০ থেকে ২০০ টাকা, চাকু ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, চাপাতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর ক্রেতার চাহিদা না থাকায় তৈরি সরঞ্জামাদি নিয়ে চিন্তিত কামাররা। 
কারিগর মো.আব্দুর রহমান রাইজিং বিডিকে জানান, ‘লকডাউনের সময়টাতে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে কাটিয়েছি। কামারশালা খোলার পর জমানো কাজগুলো দিয়ে কিছুদিন চলেছি। এখন একটু বাড়তি শ্রম দিচ্ছি ধার-দেনা পরিশোধ ও পরিবার নিয়ে কোরবানী ঈদ করতে। কিন্তু ব‌্যবসা খুব মন্দা। কোরবানির সরঞ্জামাদি দিয়ে দোকান সাজিয়ে রাখলেও ক্রেতা নেই। বাকি দুদিন বিক্রি বাড়ার আশা করছি।’
কোরবানীর জন‌্য ছুরি কিনতে আসা মো. সোহরাব হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, প্রতিবার কোরবানির সময় সরঞ্জামাদি কিনতে কামারশালায় ভিড় দেখা যায়। কিন্তু এবছর করোনার প্রভাবে সব নীরব। কোরবানির সময় দা, ছুরি, চাপাতি কেনার যে আমেজ সে আমেজটাই যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। সব সাজানো থাকলেও কেনার কোন মানুষ নেই। তবুও কোরবানীর সরঞ্জামির দাম মোটামুটি হাতের নাগালেই রয়েছে।
আরেক কারিগর মো. আব্দুল গফুর রাইজিং বিডিকে জানান, সারাবছর আমাদের যা বিক্রি হয়, তাতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালই থাকি। আমাদের হাতের কাজ তাই পরিশ্রমও বেশি। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই আমাদের ব‌্যবসায়িক অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। লোহার মূল‌্যবৃদ্ধির পাশাপাশি করোনার প্রভাবে লকডাউনে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাছাড়া কোরবানি ঈদের আগে আমাদের ব‌্যস্ততাও একটু বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর ব‌্যস্ততা থাকলেও বিক্রি একদমই নেই। 
এমন অবস্থায় বিভিন্ন কামারশালার কারিগররা খুব শঙ্কিত তাদের ব‌্যবসা নিয়ে। এক তো করোনার প্রভাব, তার ওপর লোহার মূল‌্য বৃদ্ধি। এখন যদি তৈরিকৃত সরঞ্জামাদি সঠিক সময়ে সঠিক মূল‌্যে বিক্রি না হয় তাহলে অনেক বড় ধরনের লোকসানের মুখে পরবেন তারা।   

 

কিশোরগঞ্জ /সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়