ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

রূপসার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক: নির্মাণের ৩ বছরেই মরণফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রূপসার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক: নির্মাণের ৩ বছরেই মরণফাঁদ

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের বেহাল দশা 

নির্মাণের তিন বছরের মধ‌্যেই খুলনার রূপসা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কটি জুড়ে খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকছে পানি। ফলে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।

এদিকে এলজিইডি’র সূত্র জানিয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ’র নামের এ সড়কটি তিন বছর আগে প্রায় ১ কোটি ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপসা উপজেলার জাবুসা বাজার-রূপসা ফেরিঘাট সড়ক (পূর্ব রূপসা বীরশ্রেষ্ঠ রূহুল আমিন সড়ক) থেকে খানজাহান আলী (র.) সেতু সংলগ্ন জেমিনি সি-ফুড পর্যন্ত এলজিইডি’র আওতাধীন সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দেড় কিলোমিটারই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এ সড়কের রবের মোড়ের পার্শ্ববর্তী বালুর মাঠ মেইন সড়ক, কোস্টগার্ড অফিসের সামনের অংশ এবং হাড় কোম্পানি সংলগ্ন স্থান চরম ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রূপসা ঘাট থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি স্থানে বড় ধরনের খানা-খন্দ তৈরী হয়েছে। এ খানাখন্দে পড়ে যে কোন বড় ধরনের  ‍দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

সূত্র জানায়, এ সড়ক দিয়ে বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক, মাছ কোম্পানির গাড়ি এবং পাথর, কয়লা ও টাইলসের মাটির ভারী যানবাহন চলাচল করে, যা ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া সড়কের দুপাশ জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি হীমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক কোম্পানি। তাদেরও রয়েছে ভারী যান চলে। ফলে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগে বীরশ্রেষ্ঠ রূহুল আমিন সড়কে ব্যবসায়ী ও রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান শেখের সাদিয়া এন্টারইজ নামক মাছ ঘরের সামনে বালুর ট্রাকের চাপায় পিষ্ঠ হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ৮ বছরের শিশু মিমকে। এছাড়াও গ্যাসের গাড়ি, ভ্যান ও ইজিবাইকসহ ছোট-বড় যানবাহন প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় পড়ে ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এদিকে, এ সড়কের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দেড়শ ভ্যানচালক। তারা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হওয়ায় তাদের চলাচলেও মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। 
এ সড়কে চলাচলকারী ভ্যান চালক মো. ছাদেক জানান, সড়কটির অবস্থা খারাপের কারণে যাত্রী নিয়ে যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। এছাড়া খাদ-গর্তে পড়ে ভ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে অর্থদণ্ডও দিতে হয়।

একইভাবে ভ্যানচালক মুজিবর, মাসুদ শেখ ও সেলিম খান বলেন, ‘বালু ও মাছের ট্রাকসহ সবধরনের ভারী গাড়ি চলাচলের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমরা যাত্রী নিয়ে ঠিকমত যাতায়াত করতে পারি না।  সড়কটি দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।’

এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শাহারুজ্জামান শাওন জানান, সড়কের বেহাল দশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত, এই এলাকায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের বসবাস, প্রতিটি মানুষই এই দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে৷ কিছুদিন আগেও মিম নামে একটি শিশু বালুর ট্রাকের চাপায় মারা যায়।

বালু ব্যবসায়ী মোস্তফা তারেক ময়না বলেন, ‘শুধু আমরা নই, মাছ কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভারী যান এ সড়কে চলাচল করে। এমনকি খুলনা ওয়াসা রূপসায় কাজ শুরু করলে এ সড়ক দিয়ে অনেক ভারী যানবাহন চলাচল এবং গাড়িতে করে বালু নেওয়া হয়। তারপরও বালু ব্যবসায়ী এবং মাছ কোম্পানির কর্তৃপক্ষ একত্রিত হয়ে এ সড়কটি মেরামত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এ সড়কে অবস্থিত নিউ ফুডস মাছ কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মোল্লা কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে বালুর ড্রাম থেকে ট্রাক ২০ টন পর্যন্ত লোড নেওয়া হয়, রাস্তা দিয়ে যখন চলে তখন পুরো রাস্তা কেঁপে ওঠে। সারাদিন এ রাস্তা দিয়ে প্রায় শতাধিক বালুর ট্রাক চলাচল করে। এমনকি ১০ থেকে ১২টি স্থানে ড্রেজারের বালুর পাইপ ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। হেবিওয়েট গাড়িগুলো যাতায়াতের ফলে সড়কটি নষ্ট হয়েছে। তবে, তার প্রতিষ্ঠানের গাড়ি মাসে ৪/৫ বার যাওয়া আসা করে থাকে বলেও জানান তিনি।

নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুল বলেন, বালু ভর্তি ট্রাক, মাছ কোম্পানির গাড়িসহ ওভারলোড পরিবহন চলাচলের কারণে অল্প দিনে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া কিছু জায়গায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণেও রাস্তাটি অচল হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম অহিদুজ্জামান বলেন, বালু ব্যবসায়ীরা সড়কটি ধ্বংস করে ফেলেছে। এখন সংস্কার করতে হলে আগে বালুর ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। 
তিনি বলেন, ৩ বছর আগে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। সংস্কার করতে হলে এখন ব্যয় হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। কিন্তু আপাতত এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

খুলনা/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়