ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘সিনেমাকেও হার মানাবে’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘সিনেমাকেও হার মানাবে’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুরের গৃহবধূ মল্লিকা বেগমের (ছদ্মনাম) নিখোঁজের রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেম, পরে হত্যা নাটক সাজানো, প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়া এবং সবশেষে মল্লিকা ও তার প্রেমিক আনোয়ার পুলিশের কাছে ধরা পড়লে সমস্ত রহস‌্য বেরিয়ে আসে।

পুরো ঘটনাকে এমনভাবে সাজানো হয় যা উন্মেচনের পর ঘটনাটি ‘সিনেমাকেও হার মানাবে’ বলে মন্তব‌্য করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ।

মল্লিকার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন, তদন্ত ও পুরো ঘটনা বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে ওসি জাবেদ হোসেন জানান, ১০ বছর আগে আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের ব্যবসায়ী জসিমের (ছদ্মনাম) সাথে বিয়ে হয় সদর উপজেলার চিলোকূট গ্রামের মল্লিকা বেগমের। 

১০ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই দম্পতি তিন সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন। ব্যবসার কারণে জসিম মিয়া বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রীকে নিয়ে নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলা আলগি বাজারের পাশে বাসা নিয়ে বসবাস করে আসছেন। 

সাত মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মল্লিকার সাথে পরিচয় হয় ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলার ইয়ার নুরুল্লাহপুর গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের। 

গত ২ আগস্ট ভোরে শরীফপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যান মল্লিকা। পালিয়ে যাওয়ার সময় মল্লিকা বাথরুমের পাশে নিজের চুল কেটে, একটি ব্লেড ও রক্ত ছড়িয়ে রেখে যান। ভোরে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে জসিম স্ত্রীকে ডাকাডাকি শুরু করেন। তবে তাকে আর পাওয়া যায়নি।

সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় মল্লিকার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একদিন পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে না পেয়ে পুলিশ নানা দিক নিয়ে কাজ শুরু করে। পুলিশের একাধিক টিম চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য মাঠে কাজ শুরু করে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার একটি বাড়ি থেকে মল্লিকা ও আনোয়ারকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় নেওয়া হয়। 

থানায় নেওয়ার পর তিন সন্তানসহ জসিম মিয়াকে মল্লিকার সামনে আনা হয়। সেসময় স্বামী ও সন্তানদের অস্বীকার করেন মল্লিকা। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর আসল ঘটনা স্বীকার করেন মল্লিকা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মল্লিকা জানান, প্রায়ই বাবার বাড়ির কথা বলে প্রেমিক আনোয়ারের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেখা করতের তিনি। গত ঈদ-উল-ফিতরের পর প্রেমিক আনোয়ারের সাথে হুজুর দিয়ে বিয়েও পড়ান তারা। 

বাথরুমের পাশে চুল, রক্ত ও ব্লেড রাখার বিষয়ে মল্লিকা বলেন, ‘ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ডের রূপ দেওয়ার জন্য নিজের মাথার চুল, কোরবানির গরুর রক্ত ও ব্লেড রেখে যাই। পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর সংসার ছেড়ে এসেছি আমি।’

জিজ্ঞাসাবাদে মল্লিকার প্রেমিক আনোয়ার হোসেন জানান, মল্লিকা বিবাহিত ও তার তিন সন্তান রয়েছে বিষয়টি তিনি জানতেন না। মল্লিকা তাকে জানিয়েছে তিনি অবিবাহিতা। এজন্য তাকে ভালোবেসেছেন আনোয়ার। তবে হুজুর দিয়ে বিবাহ হলেও আদালতে গিয়ে বিবাহ করতে চাননি মল্লিকা। পুলিশের কাছে আটক হওয়ার পর জানতে পারেন ভোটার আইডি কার্ডে স্বামীর নাম থাকায় তিনি আদালতে বিবাহ করতে রাজি হননি।

এ ঘটনায় শুক্রবার (৭ আগস্ট) সকালে মল্লিকার স্বামী বাদী হয়ে প্রেমিক আনোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামি ও স্ত্রী মল্লিকাকে দ্বিতীয় আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সকালেই তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

মাইনুদ্দীন রুবেল/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়