ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পে গাফিলতি, ঝুঁকিতে একাধিক স্থাপনা

আল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ৯ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পে গাফিলতি, ঝুঁকিতে একাধিক স্থাপনা

সুরমা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় অ‌্যান্ড কলেজ

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে পুরাতন সুরমা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় অ‌্যান্ড কলেজ ও পাথারিয়া বাজারসহ একাধিক সরকারি স্থাপনা। নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় এ ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সময়সীমা পার হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকা (দুই দফায় ১ কোটি ৪৮ লাখ) তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় পুরাতন সুরমা নদীর ডান তীরে পাথারিয়া নামক স্থানে ২২৩ মিটার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে অসীম সিং নামের নেত্রকোনার এক ঠিকাদার। এ প্রকল্পে দুই ধরনের ব্লক ব্যবহার করার কথা ছিল—১৯ হাজার ৪০১টি ৪০-৪০-২০ সেন্টিমিটার আয়তনের ব্লক এবং ৩১ হাজার ২২৭টি ৩৫-৩৫-২০ সেন্টিমিটার আয়তনের ব্লক। এছাড়া, জিও টেক্সটাইল লাগানোর কথা ছিল। নিম্ন মানের ব্লক নির্মাণ করা হলেও জিও টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরাতন সুরমা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় অ‌্যান্ড কলেজ, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া পোস্ট অফিস, পাথারিয়া ভূমি অফিস, পাথারিয়া কৃষি অফিস, পাথারিয়া বাজারসহ অনেক বাড়ি। সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ব্লক স্তুপ করে রাখা হয়েছে। পুরাতন সুরমা নদীর পারে রাখা আছে বেশিরভাগ ব্লক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করে চলে গেছে। ব্লক যদি মাঠে ফেলে রাখা হয়, তাহলে নদীর ভাঙন রোধ হবে কীভাবে?’

দরগাপুর গ্রামের বাসিন্দা সেজুল মিয়া বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্যার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্লকের কাজ শুরু করে। কম শ্রমিক দিয়ে কোনোমতে কাজ করা হয়েছিল। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়, ভূমি অফিস, পোস্ট অফিস ও পাথারিয়া বাজার।’

পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন কিছু ব্লক লাগানোর পর আর কাজ করছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত এ কাজ সঠিকভাবে করার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার অসীম সিংয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম প্রকল্পের কাজে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৮৫ ভাগ হয়েছে। কিছু ব্লক লাগানো বাকি আছে। ৫০ ভাগ ডাম্পিং কাজ বাকি আছে। করোনার কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ/আল আমিন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়