ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হামলার অভিযোগে ইউএনও`র মামলা, জেলহাজতে যুবলীগ নেতা 

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১০ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হামলার অভিযোগে ইউএনও`র মামলা, জেলহাজতে যুবলীগ নেতা 

বরগুনার আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন

বরগুনার আমতলীতে সরকারি কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মামলায় পৌর যুবলীগের সভাপতিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

রোববার (১০ আগস্ট) পৌর যুবলীগ সভাপতি আইনজীবী আরিফুল হাসান আরিফসহ তিনজনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইউএনও মনিরা পারভীন।

শনিবার আমতলী লঞ্চঘাটে দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে রোববার বিকেলে ইউএনও বাদী হয়ে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় আসামি আরিফ ও তার সহকারী রায়হানকে গ্রেপ্তার করে রোববার রাতেই জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার অপর আসামির নাম রায়হান (২২) । তিনি অ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসানের সহকারী। এছাড়াও এ মামলায় সুন্দরবন-০৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলসহ (৪২) অজ্ঞাত আরও ১২ জনকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীনের অভিযোগ, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না হয়, সে বিষয়ে সরকারি দায়িত্বপালন করতে আমতলী লঞ্চঘাটে যান ইউএনও মনিরা পারভীন। এসময় তিনি আমতলী থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন-০৭ লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ বেশি যাত্রী বোঝাই দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আর কোন যাত্রী লঞ্চে না উঠিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার জন্য লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলকে নির্দেশ দেন। সুপারভাইজার মইনুল তাঁর নির্দেশ অমান্য করে লঞ্চে যাত্রী ওঠাতে থাকেন এবং কেবিনের যাত্রী রয়ে গেছে বলে অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় ইউএনও মনিরা পারভীন আবারও সুপারভাইজার মো. মইনুলকে লঞ্চ ছাড়ার কথা বললে ইউএনও মনিরা পারভিনের সঙ্গে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাঁর নির্দেশ অমান্য করেন। পরবর্তীতে সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমতলীর আইনজীবী ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য অ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসান এবং তার সহকারী মো. রায়হান তাঁর পাশে থাকা একটি টেবিল ভেঙে ফেলেন এবং ইউএনও মনিরা পারভিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তিনি পায়ে এবং কোমরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এসময় আমতলী থানা পুলিশকে খবর দিলে আমতলী থানার পুলিশ ওই সময়েই আইনজীবী আরিফ উল হাসান এবং তাঁর সহকারী মো. রায়হানকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ সুপার সৈয়দ রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে মামলা গ্রহন করা হয়েছে এবং এর পরপরই দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আরিফুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ। স্থানীয় রাজনীতির একটি পক্ষের চক্রান্তের শিকার সে। মামলা হয়েছে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে ঘটনার ভিডিও চিত্র আমরা দেখেছি। তাতে অ্যাডভোকেট আরিফের কোন ত্রুটি আমরা দেখিনি। বরং ইউএনও মনিরা পারভীন তাকে অশালীন গালিগালাজসহ মারমূখী অবস্থায় ছিলেন। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসানের পিতা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাড. এমএ কাদের মিয়া জানান, তাঁর ছেলে নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার ছেলে অ্যাড. আরিফ উল হাসান তাঁর এক বন্ধুকে গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমতলী লঞ্চে এগিয়ে দিতে গেলে ইউএনওর সঙ্গে দেখা হয়। এসময় সে ইউএনওকে ছালাম দেয়। ইউএনও ছালাম না নিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করো?’ এক পর্যায়ে আরিফ উল হাসানকে অশালীন গালিগালাজ করেন ইউএনও মনিরা পারভীন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে ইউএনও তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এমএ কাদের মিয়া আরও বলেন, ‘আমরা ন্যায় বিচারের জন্য যাদের কাছে যাবো তারাই যদি এমন প্রভাবিত হয়ে মিথ্যে মামলা করেন তখন আমাদের আরও যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ‘আমার উপরে হামলা হয়েছে, আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ন্যায় বিচারের জন্য মামলা করেছি। আমি চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোবাইল কোর্টে তাদের সাজা দিতে পারতাম। আমার ওপর হামলার ঘটনায় আমি ন্যায়বিচার প্রার্থন করি।’

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘আমি জেনেছি আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এবং তাকে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমতলীর ইউএনও মনিরা পারভীন ব্যক্তিগতভাবে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা অপরাধ। বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।’ 

আইনজীবী আরিফের পরিবার, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও আইনজীবীদের পেশাজীবী সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ ঘটনায়। আরিফের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব‌্যবস্থা ক্ষমতার অপব্যবহার, ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবিত’ মামলা বলে উল্লেখ করে আরিফ উল হাসানের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেছে স্থানীয়-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ। এছাড়াও জেলা যুবলীগসহ ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের ব্যানারে আরিফুল হাসানের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। 

রুদ্র/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়