ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১০০ দিন পর কাপ্তাই হ্রদে জেলেরা, মাছের দাম নিয়ে শঙ্কা

বিজয় ধর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
১০০ দিন পর কাপ্তাই হ্রদে জেলেরা, মাছের দাম নিয়ে শঙ্কা

হৃদে মাছ ধরছে জেলেরা

অবশেষে তিন মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য তাদের শঙ্কা, পানি কম থাকায় মাছ কম পাওয়া যেতে পারে, দামও কম থাকতে পারে।

এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ মঙ্গলবার থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারও ১ মে থেকে তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছের বংশবৃদ্ধি ও পোনা অবমুক্তকরণ এবং মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ ছিল। এখন কাপ্তাই হ্রদের ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেলেদের মাঝে চলছে পুরোদমে মাছ ধরার প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। কিন্তু এবার মাছ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৫.৮২ মেট্রিক টন, যা অন্যান্য বারের চেয়ে ১৪৫ মেট্রিক টন বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মৎস্য আহরণ থেকে সরকারি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ কোটি টাকা, কিন্তু এবার রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ৩ কোটি টাকা বেশি।

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদ এলাকার রাঙামাটি সদরের অধীন পুরান-নতুন জালিয়া পাড়া, ইসলামপুর, শরিয়তপুর, সাঁওতাল পাড়াতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ পুরাতন জাল মেরামত করছেন, কেউ নতুন জাল বুনছেন এবং কেউ মাছ ধরার নৌকা/ ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরাও বসে নাই, তারাও জেলেদের সাহায্য করছে।

নিষেধাজ্ঞা চলার সময়ে সরকার জেলেদের প্রতিমাসে ২০ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। জেলে পরিবারের জন্য এ সহায়তা ছিল অপ্রতুল। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রত্যেক জেলের মাথার ওপর এনজিও অথবা দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের কিস্তি ঝুলছে। সবাই তাদের সঞ্চয় ভেঙে দিনগুলো কোনভাবে পার করছেন। এছাড়া করোনার নিষেধাজ্ঞাও যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। মাছ আহরণ ভালো হলে নানা দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় জেলেরা।

পুরাতন জালিয়া পাড়ায় নৌকা মেরামতে ব্যস্ত জেলে সুভাষ দাস (৪২) জানান, জেলেদের মাছ ছাড়া আর কোন উপার্জন নাই। তাই নিষেধাজ্ঞা চলার সময়ে যা সঞ্চয় ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার পর মাছ না পেলে তাদের দুর্দশা আরও বাড়বে।

একই পাড়ার জেলে নেপাল দাশ (৪৪) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের দেওয়া প্রতিমাসে ২০ কেজি করে চালে আমাদের সংসার চলে না। খাদ্য সহায়তা বাড়াবার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাই। মাছ মারা বন্ধের সময়ে খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের চলতে হয়।

পুরান জালিয়া পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি নির্মল দাস বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমাদেরকে মাছ শিকার বন্ধের সময়েও চুরি করে মাছ শিকার করতে হয়।’

কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃতিকভাবে মাছে প্রজনন বৃদ্ধি, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধ থাকে। একটি হিসাব মতে, জেলায় প্রায় ২৩ হাজার জেলে ছাড়াও মাছ ব্যবসার সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, ‘তিন মাস দশ দিন পর মাছ শিকার আবার শুরু হয়েছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের পানি কম থাকায় আমরা শঙ্কিত। কারণ একদিকে পানি কম অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে আমরা হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণ করে সরকারি বিভিন্ন কর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে যে মাছ পাঠাবো, এ মাছের সঠিক মূল্য পাবো কি না, তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।’ 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙামাটির ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে প্রায় ২৩ হাজার জেলের জন্য ভিজিএফ কার্ড পেয়েছি শুধুমাত্র দুমাসের জন্য। বাকি একমাসেরটা দেওয়া হয়নি।’

কাপ্তাই হ্রদেও মাছের উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উৎপাদন প্রতি বছর বাড়ছে।তবে বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছের উৎপাদন বেশি হচ্ছে।আমাদের মৎস্য অবতরণ ঘাটে বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছ বেশি আসে। এখানে বড় মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বেশিরভাগই বিক্রয় হয়ে যায়।’

তিনি জানান, ‘কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধের সময় ৪৩ হাজার ৭৪ কেজি মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি। আমি আশা করি, এ মাছগুলো বড় হলে কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনে নিম্নগতি,সে সংকট কাটবে। আর কাপ্তাই হ্রদে এখন মাছের দাম বেশি, তাই আশা করছি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন না।’ 

রাঙামাটি/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়