যশোরে ৩ কিশোরের মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি, বরখাস্ত ১
সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম
যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর নিহতের ঘটনায় ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ অফিসে নেয়া হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( বিশেষ) তৌহিদুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে। তবে এখনো কাউকে আটক দেখানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করার আগে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
এদিকে শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন, যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ৩ বন্দি কিশোর নিহত ও ৪ জন আহত হওয়ার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বসির ও উপ-পরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এসএম মাহমুদুল্লাহ। তাদেরকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার আহম্মেদ তারেক সামস নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাফিজুল হকের উপস্থিতিতে নিহত ৩ কিশোরের ময়নাতদন্ত করেছেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিহতদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। নিহত ৩ জনের পক্ষে পারভেজের পিতা বাদি হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা করেছেন। মামলা নং ৩৫। এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রকিবুজ্জামান।রাতেই তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছেন বলে জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত কমিটি গড়তে চলেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হবে। ফলে জেলা প্রশাসনকে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি করা নাও লাগতে পারে।
জেলা প্রশাসক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিষয়টিকে হালকা করে দেখছেন না কেউ। ফলে যে বা যারাই দোষী হোক না কেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বৃহস্পতিবার ৩ কিশোর নিহত হওয়ার পর রাতে যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে যান। গভীররাত পর্যন্ত তারা সেখানে থেকে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি-এ কে এম নাহিদুল ইসলামও আসেন। রাত ৩ টার দিকে তিনি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হন।
খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। মত্যু পথযাত্রীরা কেউ মিথ্য কথা বলে না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যে কারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের মারপিটের ঘটনায় নিহতরা হলো, খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)।
যশোর/টিপু
আরো পড়ুন