ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বাজার ভালো থাকলেও লোকসানে পাট চাষিরা

হাসান ফয়জী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাজার ভালো থাকলেও লোকসানে পাট চাষিরা

মানিকগঞ্জে চলতি মৌসুমে পাটের বাজার ভালো থাকলেও আশানুরুপ ফলন না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন পাট চাষিরা।

এবার ভয়াবহ বন্যার কারণে বেশির ভাগ চাষিই পাট কাটতে পারেননি। পানির নিচে দীর্ঘদিন থাকায় পাট গাছ পচে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন পাট চাষিরা।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় বিভিন্ন জাতের ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ‌্যমাত্রা ছিল। সেখানে আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০৬ হেক্টর জমিতে। প্রথম দিকে ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু মৌসুম শেষে অতি বন্যার কারণে জেলার সিংঘভাগ কৃষকই পাট কাটতে পারেননি। যে সমস্ত ক্ষেতে অল্প কিছু পানি উঠেছিল, সে কৃষকরা পাট কেটে বিক্রির উপযোগি করে তা বিক্রি করতে পেরেছেন। কিন্তু যাদের জমি পানির নিচে দীর্ঘদিন তলিয়ে ছিল। সেসব জমির পাট পচে গেছে। ফলে সেসব জমির চাষিরা পাট ঘরে তুলতে পারেননি। অন‌্যদিকে, চাহিদার তুলনায় বাজারে পাট কম ওঠায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।

সাটুরিয়া উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামের পাট চাষি করিম মিয়া বলেন, ‘বৈশাখ মাসে পাট ১২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন হলে ৪০-৪৫ মণ পাট উৎপাদন হতো। বর্তমান বাজার ২২শত টাকা করে হলে ৯৫-৯৯ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু আমার সব পাট পচে গেছে বলে উৎপাদন খরচই লস।’

একই গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার পাটচাষি আজগর বলেন, ‘৯০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে না পচে গেলে আমার ৩০-৩৩ মণ পাট উৎপাদন হতো। এবার ভালো দাম ছিল। বন্যার পানিতে পাট না পচে গেলে প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতাম। আমার উৎপদান খরচ ২২ হাজার টাকাই উঠাতে পারলাম না।’

কুষ্টিয়া গ্রামর জামাল বলেন, ‘এবার আমি ৬০ শতাংশ জমিতে ঋণ করে পাট চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে আমার সব পাট তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ২০- ২২ মণ পাট বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকার পাট বিক্রি করতাম। এখন সব লোকশান।

দৌলতপুর উপজেলার বহরা গ্রামের সোহেল বলেন, ‘আমার খেতে পানি কম উঠেছিল। তাই আমার পাট নষ্ট হয় নাই। বৃহস্পতিবার ৩০ মণ পাট ২১ শত টাকা ধরে বিক্রি করছি।’

দিঘুলিয়া গ্রামের বাদল বলেন, ‘আমি এ বছর ২ প্লটে ৭০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। এক প্লটে ৩০ শতাংশ জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেক ৪০ শতাংশ জমিতে অল্প পানি উঠেছিল। সেখানে ১৫ মন পাট বিক্রি করে ৩৩ হাজার টাকা পেয়েছি।’

পাট চাষি শওকত বলেন, ‘করোনার সময় বেকার ছিলাম। হাতে টাহা পয়সা ছিল না। রাস্তায় বাইরাতে পারি নাই বাপু। তহন কোন আত্নীয়রাও টেহা ধার দেয় নাই। মহাজনদের নিকট সুদ নিয়া পাট চাষ করছিলাম। বন্যার পানিতে আমার সব আশা ডুইবা গেছে। এক মণ পাটও বেচা পারলাম না। সব পইচা গেছে।’

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাজাহান আলী বিশ্বাস জানান, ভয়াবহ বন্যার পানি দীর্ঘদিন থাকায় অনেক কৃষকর পাট পচে গেছে। অপরদিকে, যে সমস্ত পাট ক্ষেতে কম পানি উঠেছে তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হননি। পাটের দাম ভালো থাকায় তারা লাভবান হয়েছেন। কিন্তু সে সংখ‌্যাটা অল্প। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাট চাষিদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়