ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছেন ডাক্তার আপা’

সেলিম আব্বাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৮ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছেন ডাক্তার আপা’

ডা. সুলতানা পারভীন

জামালপুরের মেলান্দহ হাসপাতালে চাকরি করতেন ডা. সুলতানা পারভীন। মাত্র দেড় বছরেই মন জয় করেছেন সহকর্মী, রোগী, রোগীর স্বজনদের। সবাই তাকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘ডাক্তার আপা’ বলে। যার ঠোটের কোনে সব সময় হাসি, সেই ডাক্তার আপা আত্মহত‌্যা করেছেন তা মেনে নিতে পারছেন না পরিচিতরা।

প্রায় ৪ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তিনি। স্বামী সাব্বির ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র। সাব্বিরের বাড়ি খুলনা জেলায়। বিয়ের পর তাদের মধ্যে শুরু হয় কলহ। সাব্বির চলে যান কানাডা। সেখান থেকেই সাব্বির ডা. সুলতানা পারভীনকে তালাক দেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে সাব্বির ফের বিয়ে করেন। স্বামীর বিয়ের খবর মেনে নিতে পারেননি তিনি। শরীরে ৫টি প্যাথেডিন পুশ করে আত্মহত্যা করেন। হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপজেলা পুলিশ প্রশাসন এসব তথ‌্য জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, হাসপাতাল কোয়ার্টারে তার কক্ষের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধারের সময় পাওয়া গেছে একটি চিঠি ও ডায়েরি। ডায়েরিতে সাব্বিরের সঙ্গে প্রেম, বিয়ে, কলহ ও বিচ্ছেদ নিয়ে অনেক কথা লেখা আছে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ডা. সুলতানা পারভীনের দাদা বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপ থানার বাউনিয়া এলাকায়। তার বাবা আলাউদ্দিন আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পেশায় ছিলেন রেলপুলিশের ইন্সপেক্টর। চাকরির সুবাদে বাবা রাজশাহী জেলা সদরের পোস্টাল একাডেমি গলি এলাকায় স্থায়ী নিবাস গড়লে সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। এইসএসসি পর্যন্ত রাজশাহীতেই তার লেখাপড়া। এরপর রংপুর মেডিক‌্যালে লেখাপড়া করেন তিনি। চার বোনের মধ্যে ডা. সুলতানা ছিলেন সবার বড়। তার মা-বাবা ও বোনেরা এখন ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন।

মেলান্দহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যোগদান করার আগে ডা. সুলতানা পারভীন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখানে যোগদান করার পর একাই থাকতেন হাসপাতাল কোয়ার্টারে।

মেলান্দহ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আতাউর রহমান ডা. সুলতানা পারভীনের সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতেন। তিনি জানান, তার মুখে কখনও বিষন্নতার ছায়া দেখা যায়নি। তিনি একজন সুদক্ষ চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত মানুষ। এভাবে তিনি আত্মহত‌্যা করবেন কল্পনাও করা যায় না।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক‌্যাল অফিসার ডা. নাজমুল হাসান নবীন বলেন, ‘মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তিনি ডিপ্রেশনে ছিলেন আমরা কখনও বুঝতে পারিনি।’

শনিবার (১৫ আগস্ট) জামালপুর শহরের শাহজামাল হাসপাতালে রোগী দেখে রাতে ডা. সুলতানা পারভীন কোয়ার্টারে ফেরেন। রোববার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ডা. সুলতানা পারভীনের লাশ উদ্ধার করেন।
রাতেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক বাদি হয়ে মেলান্দহ থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন বলে জানান ওই থানার ওসি রেজাউল করিম খান।

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, ‘এ ডাক্তারের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আইনি তদন্ত চলছে।’

সহকারী পুলিশ সুপার সীমা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, হতাশা থেকেই আত্মহত‌্যা করেছেন তিনি। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশি তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।’
 

জামালপুর/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়