ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদ (ভিডিও)

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৯ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের কথা এখন অনেকেরই জানা।  যে মসজিদের দানবাক্স খুললেই মিলে কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালঙ্কার- আর এ কারণে মসজিদটির নাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাব্দী পুরনো পাগলা মসজিদ।  পাঁচ তলা উঁচু মিনারের মসজিদটি দূর থেকেই নজর কাড়ে।  

স্থানীয়রা বলছেন, এই মসজিদে মানুষ দু’হাত খুলে দান করেন।  শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনকেও এ মসজিদে দান করতে দেখা যায়।  এটি দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদ।  তারা বলছেন, প্রতিমাসে কেবল দান থেকেই এ মসজিদের নগদ আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

মসজিদের দান-খয়রাতের সিন্দুক খোলা হয় তিন মাস পরপর।  দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায়- নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী।  প্রতিবারই কোটি টাকার উপরে নগদ অর্থ পাওয়া যায় মসজিদটিতে।  আর ভরি ভরি সোনা, রূপা, হীরার আংটিসহ অন‌্যান‌্য মূল‌্যবান সামগ্রীও নিলামে তুলে মসজিদের প্রচুর আয় হয়। 

আসলে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক কিশোরগঞ্জের এই পাগলা মসজিদ।  কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আড়াইশ বছরের প্রাচীন এ মসজিদটি। 

এর ইমরাত ও নির্মাণশৈলী মুগ্ধ হবার মত।  আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত।  মসজিদটির পরিচিতি শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় এর ঐতিহ্য সকল ধর্মপ্রাণ মানুষজন বুকে লালন আসছে।  কিশোরগঞ্জ শহরের যেকোন স্থান থেকে খুব সহজেই রিকশাযোগে যাওয়া যায় এ মসজিদে।

পাগলা মসজিদ বর্তমানে অনেক সম্প্রসারিত।  মসজিদটি প্রথমে শহরের হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ি ১০ শতাংশ ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে গড়ে উঠে।  এখন জমির পরিমাণ তিন একর ৮৮ শতাংশ।  মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটিতে রাখা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।  মসজিদের অর্থায়নে ২০০২ সালে গড়ে উঠেছে নুরুল কুরআন এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা।  এখানে ছেলে-মেয়েদের থাকা-খাওয়া, পোশাকসহ লেখাপড়ার খরচ বহন করা হয়।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।  জানা যায়, পাগলবেশি এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মাঝখানে মাদুর পেতে ভেসে আসেন।  বর্তমান মসজিদের কাছে অবস্থান করেন।  ওই সময় তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন।  পরে তার এবাদত-বন্দেগির জন্য নদীর মাঝখানে টিলার উপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হয়।  কালের পরিক্রমায় ওই ঘরটি পরবর্তীতে ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

আবার এমনও জনশ্রুতি রয়েছে, হয়বতনগর প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকত। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ‘পাগলা বিবি’র নামে সেটি পরিচিতি পায়। পরে তা হয়ে যায় ‘পাগলা মসজিদ’।

১৯৭৯ সালের ১০ মে ওয়াকফ স্টেটে চলে যাওয়ার পর মসজিদটি পরিচালিত হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে।  বর্তমানে পদাধিকার বলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।  তাদের তদারকিতে মসজিদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত স্বচ্ছ।

মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাথে কথা হলে তারা জানান, দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত পাগলা মসজিদ।  এখানে মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  যা বাস্তবায়ন হলে ৫০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন।  তাছাড়া পাগলা মসজিদের অর্থায়নে এলাকার অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হচ্ছে।  এলাকায় দরিদ্র অসহায় অসুস্থ অসচ্ছল পরিবারের জন্য পাগলা মসজিদ থেকে অনুদান দেওয়া হয়।  এ মসজিদের গণমুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গরীব শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও অভাবী নারীর বিয়ের জন্যও সাহায্য করা হয়।

 

কিশোরগঞ্জ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়