কমলগঞ্জে ধলই চা বাগানে ২ নারী লাঞ্ছিত, এজিএমের গাড়ি ভাঙচুর
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগান দীর্ঘ ২২ দিন পর চালু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করেছে। বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না হওয়া ও বাগান চালুর নোটিশে এর আগে বন্ধের জন্য শ্রমিকদের দায়ী করায় চা শ্রমিকরা কাজে যাননি।
আজ বুধবার সকালে কোম্পানীর এজিএম বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এসময় দুই নারী শ্রমিককে টানাহেঁচড়া করে লাঞ্ছিত করায় গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে টানা চার ঘণ্টা এজিএম খালেদ খানকে অবরুদ্ধ করেন শ্রমিকরা।পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। পরে ১০টার দিকে কোম্পানির এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। এসময়ে শ্রমিকরা তাকে আপত্তি জানালে দুই নারী শ্রমিককে টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা বাগানের এজিএমে গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন ও এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে দুপুর ২ টার দিকে শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কয়েকজন চা শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২২ দিন পর এজিএম বাগানে এসেই নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। তাদের টানাহেঁচড়া করে গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলছে। এটি কোন মতেই সভ্য আচরণ নয়। আমরা এখনও ধৈর্য ধরে আছি। আমরা কোন খারাপ আচরণ করিনি।’
গত সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ এম এ শহীদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেআইনিভাবে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় দেওয়া ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে ধলই চা–বাগান খুলে দেওয়া হবে। চা–শ্রমিকদের দাবির মুখে বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে অপসারণ করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। ওই বৈঠকের পর এদিন রাতেই ধলই চা বাগান কোম্পানি বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ধলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, দীর্ঘ ২১ দিন চা বাগান বন্ধ থাকার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সোমবার দলই চা বাগানে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের বেআইনি নোটিশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে চা বাগান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে চা শ্রমিকদের মজুরি ও বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিষয়টি পরবর্তীতে আলোচনাক্রমে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়। ব্যবস্থাপক আপাতত দলই চা বাগানের বাহিরে থেকে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকারও সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্তে ধলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরা একমত হন। তবে সোমবার রাতের আঁধারে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ সকালে চা শ্রমিকরা অবস্থান করলে এজিএম দুই নারী চা শ্রমিকের গায়ে হাত তোলেন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ির গ্লাসে ঢিল ছুড়েন।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, চা শ্রমিকদের বোঝানোর পর তারা পরিবেশ তৈরী করায় নিরাপদে এজিএম ও ব্যবস্থাপককে ধলই চা বাগান থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন,গাড়ি ভাঙ্গচুর ও নারী চা শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ারও মৌখিক অভিযোগ থাকলেও বিকাল পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
সাইফুল্লাহ/সাজেদ
আরো পড়ুন