ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ডা. সুলতানা পারভীনকে হত্যা করা হয়েছে, দাবি পরিবারের 

জামালপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২২ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ডা. সুলতানা পারভীনকে হত্যা করা হয়েছে, দাবি পরিবারের 

গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা পারভীন আত্মহত্যা করেনি, তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছে তার পরিবার।

শুক্রবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ডা. সুলতানা পারভীনের ছোট বোন মেরিনা পারভীন বলেন, তার ঠোঁট কাটা, মুখে নাকে চোখে রক্তাক্ত জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। জিহ্বা দাঁত দিয়ে কামড় দেয়া ছিল। শ্বাসরোধ করে হত্যা করার মতো গলায় কালশিটে দাগ ছিল। 

মেরিনা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। অনেক দেরিতে আমাদের খবর দিয়েছে পুলিশ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনো কর্মকর্তা এমনকি কোনো ডাক্তার আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। মৃতদেহ দেখতে পর্যন্ত দেয়নি। খোলা আকাশের নিচে একজন নারীর পোস্টমর্র্টেম করা হয়েছে যা খুবই অবমাননাকর। তার কাফনের কাপড়ও দেয়নি কেউ। 

ডা. সুলতানা পারভীনের এই ছোট বোন বলেন, আমার বোনের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আমরা সত্যিটা জানতে চাই।

তিনি বলেন, এটা হতে পারে আত্মহত্যা বা হত্যা, সেটা আপনারা প্রমাণ করুন। তার গায়ে কাপড় ছিল না। কাপড় কোথায়? গায়ে তো কাপড় ছিল। তার দাঁতে জিহ্বা আটকা কেন? শ্বাসরোধ না করলে জিহ্বা দাঁতের মধ্যে আটকে থাকে না। এটা আত্মহত্যা হলে গলায় দাগ থাকবে কেন? তাহলে কি ডা. সুলতানা পারভীন নিজেই নিজের গলা টিপে দাগ করেছেন? চোখের কোণে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ার ছাপ ছিল। ঘুষি মারলে যেরকম কালো থ্যাতলানো দাগ হয় আমার বোনের মুখমণ্ডলে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ ছিল। নাক থেকেও রক্ত ঝরছিল। 

তিনি বলেন, আমাদের অনেক দেরিতে খবর দিয়েছে পুলিশ। আমরা আসার পর স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ন্যূনতম সহযোগিতা দূরে থাক, সহমর্মিতাও দেখায়নি। যে ভবন থেকে আমার বোনের লাশ উদ্ধার হয়েছে সেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনুনয় বিনয় করলেও লাশটা পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। লাশ দেখার জন্য সাহায্য চাইলেও লাশ দেখার পরমিশন দেয়নি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। পরে মর্গে এসে আমরা অনেক কষ্টে ঢুকে দেখেছি লাশটা কিভাবে রাখা হয়েছে। গায়ের কাফনের কাপড় কিনে দিতে স্থানীয় ডাক্তাররা এগিয়ে আসেননি। যেখানে একটা নার্সকে সামান্য বাজে কথা বললে আন্দোলন দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে একজন প্রসিদ্ধ ডাক্তারের মৃত্যুর প্রতিবাদ হয় না। লাশটা রেখেছিল গুদাম ঘরে। সামনে ডাস্টবিন। একটা ছোট্ট স্টোর রুমে পলেথিনে বাঁধা অবস্থায় ছিল আমার বোনের লাশটা। তৃতীয় দিনে দাফন করতে হয়েছে।

কান্নারত কণ্ঠে মেরিনা পারভীন আরও বলেন, আমার বোনকে আর কষ্ট দিয়েন না। আমরা পোস্টমর্টেম চাইনা। লাশটা দিন। লাশ দাফনের সুযোগ করে দিন। আমরা যেন আইনের আশ্রয় নিতে না পারি সেজন্য লিখিত নিয়েছে, কোনো দাবি-দাওয়া-অভিযোগ নেই। লাশটা ছুটিয়ে নিতে লিখিত দিতে বাধ্য হয়েছি। লিখিত নেবার পর পোস্টমর্টেম করেছে খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়। রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ একজন ডাক্তারকে কী সম্মান দিল? একজন নারীর লাশ এভাবে খোলা আকাশের নিচ রাস্তায় পোস্টমর্টেম করা হয়েছে যা খুবই অবমাননাকর। 

স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি তিনি সুষ্ঠু তদন্তসহ সঠিক পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দাবি জানান মেরিনা পারভীন।

ডা. সুলতানা পারভীনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আজাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মেয়েকে হত্যা করার দুটি পক্ষ রয়েছে। একটা পক্ষ হলো তার প্রাক্তন স্বামীর পরিবার, আরেকটা পক্ষ হলো পেশাগত দ্বন্দ্ব। আমার মেয়ের পেছনে তার শাশুড়ি পরিবার পরিকল্পনার সাবেক পরিচালক শাহানা আক্তার ছায়ার মতো লোক লাগিয়ে রেখেছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ মকবুল হোসেন মোর্শেদ পরিবার পরিকল্পনা আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (নিপোর্ট) মেলান্দহে বদলি হয়ে এসেছিলেন। তিনি আমার মেয়েকে সবসময় ফলো করতেন। তার সাথে দেখা হবার পর আমার মেয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেছিল- মা, বিপদ আমার পিছু ছাড়ছেনা। সাব্বিরের দূর সম্পর্কের মামা মকবুল হোসেন মোর্শেদ এখানে বদলি হয়ে এসেছেন। ভয় করছে। কখন কোন বিপদে পড়ি। আমরা লোক মারফত জেনেছি, মকবুল হোসেন মোর্শেদ মেলান্দহ থেকে জানুয়ারি মাসে বদলি হয়ে যাবার পরও  ঘটনার  চারদিন আগে মেলান্দহে এসেছিলেন। তিনি কেন এসেছিলেন? আমার মেয়েকে হত্যার পেছনে তারও হাত থাকতে পারে।

আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, আমার মেয়ে ছিল গরীবের ডাক্তার। তার দক্ষতা ও সেবায় মেলান্দহে সুনাম অর্জন করায় স্থানীয় ডাক্তাররাও হুমকি দিত সে যেন প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করে। কলিগরাও তার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ ছিল। এদেরকেও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তারকে এভাবে কেন প্রাণ দিতে হলো? এজন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বলে অঝোরে কাঁদেন বাবা। 

তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র উদঘাটন করে সুবিচার দাবি করেন।

উল্লেখ্য, রোববার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টায় জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটার থেকে ডা: সুলতানা পারভীনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সেলিম আব্বাস/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়