ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জোয়ারে ডুবছে লক্ষ্মীপুর, ১১ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২২ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জোয়ারে ডুবছে লক্ষ্মীপুর, ১১ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

কয়েক দিনের জোয়ারে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের ক্ষতি হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও অসংখ‌্য মুরগির খামারের ক্ষতি হয়েছে, শতাধিক ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এক সময়ের বেড়িবাঁধগুলো বিলীন হওয়ার পর স্বাভাবিক জোয়ারেও ডুবে যায় নিম্নাঞ্চল, এবার এরই মধ‌্যে ডুবে গেছে বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছের জেলাটির দক্ষিণ অংশ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, সেই সঙ্গে লাখো মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি।

পানি নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের বেড়িবাঁধ লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে। এজন্য সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়ে মেঘনা তীরবর্তী এলাকার মানুষগুলো। থাকা-খাওয়া, রান্না ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে কষ্টে দিনানিপাত করতে হয় তাদের।

জানা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৭৬ সালে রামগতি, কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদরের একাংশে ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে সে বাঁধটির প্রায় ৩০ কিলোমিটার বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই সামান্য বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় এখানকার নিম্নাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে এখানকার বাসিন্দারা। বসবাস, থাকা, খাওয়া ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়তে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে।

আরও জানা যায়, জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতির ৬০ কিলোমিটার নদীর তীরবর্তী এলাকা। এসব অঞ্চলে নেই পর্যাপ্ত নদীর তীর রক্ষা ও বেড়িবাঁধ। ফলে গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে এখানকার ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ শতাধিক মাছের ঘের ও মুরগির খামার ক্ষতির শিকার হয়েছে।

এদিকে বেড়ি ও নদী তীর রক্ষাবাঁধের জন্য স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। ফলে ভয়াবহ ভাঙন ও জোয়ারের পানিতে ডুবছে মেঘনা সংলগ্ন লোকালয়।

কমলনগরের চর লরেন্স ইউনিয়নের তাজ পোল্ট্রি খামারের মালিক মো. ওসমান বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে ডুবে খামারের সাড়ে ৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মুরগির খাবারও। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।

রামগতির বাসিন্দা নুর মাঝি বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নেই, জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে পুরো এলাকা। পানির তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে গেছে রাস্তা। উঠে যাচ্ছে পাথরের কার্পেটিং। ঘরের ভিতরেই হাটু পরিমাণ পানি। নষ্ট হয়েছে জমির ফসল। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। প্রত্যেক বছরই এই সমস্যাটি হয়। তবুও বেড়িবাঁধ দিচ্ছে না সরকার।’ 

চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ বলেন, জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট আর ফসলি জমি। এতে একদিকে কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছে না কৃষক। অন্যদিকে প্রতিবছরই রাস্তা সংস্কার করতে হয়।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘একসময় বেড়িবাঁধ ছিল। তবে মেঘনান ভাঙনে কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। নতুন বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।’

লক্ষ্মীপুর /সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়