ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনার পরিস্থিতিতেও রাঙামাটির মৌসুমি ঝর্ণাগুলোতে ভিড় বাড়ছে  

বিজয় ধর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৪ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৬:২৩, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনার পরিস্থিতিতেও রাঙামাটির মৌসুমি ঝর্ণাগুলোতে ভিড় বাড়ছে  

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেগে ওঠে পাহাড়ের খাদে লুকিয়ে থাকা মৌসুমি ঝর্ণাগুলো। এবার বর্ষার শুরুতে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকলেও করোনার ভয় কাটিয়ে রাঙামাটির এমন সব ঝর্ণায় প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় আবার বাড়ছে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিস্তৃত পাহাড়রাশিতে অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রাঙামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্ণা, কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ঝর্ণা, বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ধূপপানি ছড়া ঝর্ণা, কেংড়াছড়ির মুপ্যাছড়া ঝর্ণা, নকাটা ছড়া ঝর্ণা, ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের গাছ কাটা ছড়া ঝর্ণা ও কাপ্তাইয়ের পাগলী উপর পাড়ায় ফুকির মুরং ঝর্ণা। রাঙামাটি জেলায় এসব ঝর্ণাসহ প্রায় ছোট বড় ৩০টি ঝর্ণা আছে।

এদিকে রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত শুভলংয়ের ঝর্ণাগুলো, এখানে রয়েছে প্রায় ৭-৮ টি ঝর্ণা। তবে বড় ঝরনা একটিই। যেটি শুভলং ঝর্ণা নামে বেশ পরিচিত রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব ঝর্ণা তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত জেগে থাকে। সাধারণত বর্ষাকাল জুড়েই প্রবাহিত হয়এসব ঝর্ণাধারা। বিশাল আকৃতির শুভলং ঝর্ণাটি যে মৌসুমী ঝর্ণা, বিশ্বাস করতেই যেন মন চায় না। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক এই ঝর্ণায় চোখ জুড়িয়ে এক পলক দেখতে আসেন। অনেক পর্যটক রাঙামাটি এসেও শুভলং ঝর্ণা না দেখেই ফিরে যান পর্যাপ্ত তথ্য না পেয়ে। 
চট্টগ্রাম থেকে শুভলং ঝর্ণায় বেড়াতে আসা পর্যটক ক্যাথরিন জানান, ‘ঝর্ণার শীতল পানিতে ভিজতে খুবই ভাল লাগছে। এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

পর্যটক জাহিদ ও সুইটি দম্পতি বলেন, অনেকদিন ধরে লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি ছিলাম। এখন পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ায় রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণার অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করতে এসেছি।’

কীভাবে আসবেন শুভলং ঝর্ণায়
রাঙামাটি শহর থেকে লঞ্চ অথবা ভাড়া করা বোটে সুভলং আসা যায়। রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ২টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশে। এর মধ্যে লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যে কোন লঞ্চ উঠলেই সুভলং পৌঁছে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পুনরায় নৌকা ভাড়া করে ঝর্ণাস্থলে আসতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি দলবেঁধে এসে রির্জাভ বাজার, তবলছড়ি, বনরুপা, অথবা পর্যটন কমপ্লেক্স থেকে বোট ভাড়া করা যায়। এতে ইচ্ছেমতো ঝর্ণাস্থলে সময় কাটানো যাবে। বোট ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত পড়বে। এটা নির্ভর করবে যাত্রী সংখ্যা ও বোটের আকৃতির ওপর। স্পিডবোট ভাড়া করেও ঝর্ণাস্থলে যাওয়া যায়। এতে ভাড়া ২০০০-২৫০০ টাকা নিতে পারে। সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিটি। বোটের ধারণক্ষমতা তিন-পাঁচ জন।

সুভলং এলাকায় থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। সুতরাং দিনে দিনেই ফিরে আসতে হবে। শুভলং ঝর্ণার প্রায় কাছাকাছি অবস্থিত ২২০০ ফুট উুঁচু। পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে সেনা ক্যাম্প ও টিএন্ডটি টাওয়ার। পাহাড়ের ওঠার জন্য চমৎকার সিঁড়ি কাটা আছে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য পাহাড় চূড়া থেকে চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যবলি দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে।

অন্যদিকে রাঙামাটির ঘাগড়া ঝর্ণায় আসতে হলে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় আসতে হয়। রাঙামাটির প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ২০-২৫ মিনিটি পায়ে হেঁটে যেতে হয় ঘাগড়া ঝর্ণায়। এ কলাবাগান এলাকায়ও প্রায় ৪/৫টি ছোট ছোট ঝর্ণা রয়েছে।

কাপ্তাইয়ের ফুকির মুরং ঝর্ণা 
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পাগলী ওপর পাড়ায় ফুকির মুরং ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিন দিন পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
 এর আশেপাশে ছোট বড় কয়েকটি ঝর্না, সেসব ঝর্না হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং পাহাড়, বন বেষ্টিত এই ফকির মুরং কুয়া যেন প্রকৃতি দেবীর এক অপূর্ব সৃষ্টি। তাই প্রতিদিন ভিড় লেগে আছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। কথিত আছে আজ হতে শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো, লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো। ফকির ধ্যান করতো বলে স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফুকির মুরং বা ফকির কুয়া।

রাঙামাটির কাউখালীর ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে  ৪ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ আর ছড়া পাড় হয়ে এই স্থানে পৌঁছানো যায়। পথিমধ্যে পাগলি মুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়ায় এই ঝর্ণার দেখা মিলবে। এই স্থানে যেতে যেতে আরও পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা।

এই ঝর্ণা দেখতে আসা পর্যটক অরুপ, হীমেল, জান্নাত আরা সাথি জানান, প্রকৃতি দেবী যেনো তাঁর আপন মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছে এই স্থানটিকে। এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য সুমন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, ৬ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য মায়ারাম তঞ্চঙ্গ্যা এবং এলাকার বাসিন্দা কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে এই স্থানটিকে দেখতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গা থেকে পর্যটকরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন।

৫ নং ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এই ঝর্না এখন মানুষের বিনোদনের একটা স্থানে পরিণত হয়েছে। যদি অবকাঠামোগত আরও উন্নয়ন হয় তাহলে এখানে আরও পর্যটক বাড়বে। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।

রাঙামাটি/সাজেদ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়