ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অন্ধ হয়েও গাছ বেয়ে সংসার চালান ঝালকাঠির কুদ্দুস

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ২৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১১:২২, ২৭ আগস্ট ২০২০
অন্ধ হয়েও গাছ বেয়ে সংসার চালান ঝালকাঠির কুদ্দুস

ঝালকাঠির কিফাইত নগর এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কুদ্দুস মোল্লা (৫২) ৩২ বছর ধরে গাছ বেয়ে মা-হারা তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। অন্ধ বাবাকে মেয়েরা গাছের কাছে নিয়ে গিয়ে ধরিয়ে দেয়, এরপর সুস্থ মানুষের চেয়েও দ্রুতগতিতে উঠা-নামা করতে পারেন তিনি। খুপড়ি ঘরে কোন রকমে দিন কাটলেও তিনি কারও কাছে হাত পাতেন না।

জানা যায়, ১১ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে দুচোখের দৃষ্টি হারান দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান। এ অবস্থায় দিনমজুরি শুরু করলেও তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। ২০ বছর বয়স থেকে শুরু করেন নারিকেল ও সুপারি গাছ বেয়ে রোজগারের চেষ্টা। কখনো অন্যের গাছের নারিকেল পেড়ে, আবার নারিকেল গাছ পরিষ্কার করাই হয়ে ওঠে তাঁর পেশা। মাঝে মধ্যে সুপারি পেড়ে দিয়েও কিছু আয় হয় কুদ্দুস মোল্লার। অন্ধ হয়েও নারিকেল এবং সুপারি গাছ বেয়ে ওঠায় পারদর্শী তিনি। সুস্থ একজন মানুষের চেয়ে তিনি দ্রতগতিতে গাছে উঠতে ও নামতে পারেন। একটি নারিকেল গাছে ওঠার জন্য তিনি ৫০ থেকে ১০০ টাকা রোজগার করেন। কেউ আবার গাছপ্রতি দুই-তিনটি নারিকেল দেন। এগুলো বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কুদ্দুস মোল্লা জানান, ২২/২৩ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোন রকমের দিন কেটে যেতো। দশ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে সঙ্গীহীন হয়ে পড়েন। এরপরই তিন মেয়েকে নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েন কুদ্দুস মোল্লা। তারপরও দারিদ্র‌্য এবং অন্ধত্বের কাছে হার মানেননি তিনি। মায়ের মমতা দিয়ে লালন পালন করেন তিন মেয়েকে। বছর তিনেক আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। অর্থের অভাবে কোন মেয়েকেই লেখা পড়া করাতে পারেননি। এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।

কুদ্দুস মোল্লার জীবন সংগ্রামের কারণে এলকার মানুষও তাকে নিয়ে গর্ব করে। কারণ তিনি কষ্ট করে সংসার চালালেও অন্যের কাছে হাত পাতেননি।

কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ‘মানুষের কাছে হাত পেতে লজ্জায় পড়তে হয়। আমি চোখে দেখি না, তাই বলে কোন কাজ করতে পারবো না? আমার শক্তি আছে, মনবল আছে। আমি ভিক্ষা পছন্দ করি না, তাই চোখে না দেখেও নারিকেল ও সুপারি গাছে উঠে ফল পাড়তে পারি। আমার ছোট মেয়ে আমাকে গাছের কাছে নিয়ে ধরিয়ে দেয়। এর পরে আমি নিজেই উঠে যাই। নারিকেল পেড়ে দেওয়ার জন্য গাছপ্রতি কেউ ১০০, কেউ একটু বেশি দেয়। অনেকে আবার একজোড়া নারিকেল দেয়। যে যাই দেয়, তাতেই আমি খুশি। বর্তমানে আমি খুব অসহায় অবস্থায় আছি। বৃষ্টির মধ্যে কেউ গাছে উঠাতে চায় না। যদি পড়ে গিয়ে মরে যাই। শেষ বয়সে আমার ইচ্ছা, দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আর নিজের জন্য একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা।’

কুদ্দুস মোল্লার প্রতিবেশী মো. রাজু খান বলেন, ‘আমাদের আশেপাশে যতগুলো বাড়ি আছে, সবার নারিকেল ও সুপারি গাছ থেকে ফল পেড়ে দেন কুদ্দুস ভাই। তিনি অন্ধ হয়েও যথেষ্ট পরিশ্রমি। কখনো তাকে ভিক্ষা বা অন্যের কাছে হাত পাততে দেখিনি। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি।’

ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবদুল কুদ্দুস মোল্লার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া ও প্রতিবন্ধী কার্ড করতে সহযোগিতা করেছি। তিনি খুব ভালো মানুষ।

ঝালকাঠি/সাজেদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়