ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিনা অপরাধে ২০ বছর কারাবাস: মুক্তির অপেক্ষায় সেই জাহিদ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ২৯ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ২০:১৩, ২৯ আগস্ট ২০২০
বিনা অপরাধে ২০ বছর কারাবাস: মুক্তির অপেক্ষায় সেই জাহিদ

খুলনা জেলা কারাগার (ফাইল ফটো)

স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু কন্যাকে হত্যার অভিযোগে ২০০০ সালের ২৫ জুন মৃত্যুদণ্ড হয় শেখ জাহিদের। তারপর থেকেই তিনি কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) তাকে খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এখন কারাগার থেকে মুক্তির অপেক্ষায় আছেন শেখ জাহিদ।

সর্বোচ্চ আদালত খালাসের রায় দিলেও লিখিত নির্দেশনা হাতে না পাওয়ায় চার দিনেও মুক্তি মেলেনি জাহিদের। তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা কারাগারে আছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা জাহিদের চোখে এখন শুধু মুক্ত পৃথিবীর আলো-বাতাসে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

খুলনা জেলা কারাগারের সুপারিনটেনডেন্ট মো. ওমর ফারুক রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘জাহিদ খালাস পাওয়ার তথ্য জানতে পেরেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে তার কারামুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশ না আসায় তাকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমার সঙ্গে খুলনার রূপসা উপজেলার নারিকেলি চাঁদপুরের ইলিয়াছ শেখের ছেলে জাহিদ শেখের বিয়ে হয়। জাহিদ শেখ শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। তাদের সংসারে আসে কন্যা সন্তান। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি রহিমার বাবার বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘরে বসবাস শুরু করে ওই দম্পতি। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে রহিমার মা আনজিরা বেগম মেয়ের বাড়ির দরজা ভেজানো অবস্থায় দেখতে পান। বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর কাঁথা ও লেপের নিচে বাচ্চাসহ রহিমার লাশ দেখতে পান তিনি। পরের দিন রহিমার বাবা ময়েন উদ্দিন বাদী হয়ে ফকিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, তার মেয়ে ও নাতনির গলায় মাফলার দিয়ে গিঁট দেওয়া ছিল। সেদিন সকালে প্রতিবেশীরা জাহিদ শেখকে টেম্পোতে করে খুলনার দিকে যেতে দেখেছেন।

ময়েন উদ্দিনের অভিযোগ ছিল, তার মেয়ে ও নাতনিকে হত্যা করে পালিয়েছেন শেখ জাহিদ।

১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তার আগেই ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাহিদ। পরে জামিন পেলেও আবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর ২০০০ সালের ২৫ জুন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত জাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর জেল আপিল করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টে শেখ জাহিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ জানিয়েছেন, এ মামলার ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী ছিল না। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও জেল আপিলের শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই ফাঁসির রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে জেল আপিল করেন জাহিদ। গত সপ্তাহে সে আপিলের শুনানি শেষে ২৫ আগস্ট জাহিদের খালাসের রায় দেন আপিল বিভাগ।

শেখ জাহিদের চাচা শেখ আকরাম হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জাহিদের জীবনের ২০ বছর ফেরত দেবে কে? কে দেবে তার জবাব? মাতৃ-পিতৃহীন ও সম্বলহীন জাহিদের দায়িত্ব নেবে কে?’

তিনি জানান, জাহিদ জেলে থাকা অবস্থায় তার বাবা ইলিয়াস শেখ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং মাতা হামিদা বেগম বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা গেছেন। জাহিদ এখনো জানে না তার বাবা-মা’র মৃত্যুর খবর।

বিনা দোষে শেখ জাহিদের কারাবাসের জন‌্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আকরাম হোসেন। জাহিদের কারামুক্তির পর তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জাহিদের ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রথমে জাহিদের নামে নারী নির্যাতন আইনে ফকিরহাট থানায় মামলা হলে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই টাকা দিতে না পারায় জাহিদকে দোষী সাব্যস্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়।

স্বজনরা এখন জাহিদের মুক্তির অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন আজিজুর রহমান।

২০ বছর পর স্ত্রী-কন্যা হত্যার দায় থেকে মুক্তি মিললো জাহিদের

খুলনা/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়