ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চুরির অপবাদ দিয়ে ২ কিশোরকে বেঁধে মারধর, আটক ২

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০২:১৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
চুরির অপবাদ দিয়ে ২ কিশোরকে বেঁধে মারধর, আটক ২

মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে দুই কিশোরকে। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে শনিবার রাতে দুজনকে আটক করে পুলিশ।

বৃহষ্পতিবার ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চর ভবানিপুর এলাকায় এমন নৃশংস অত‌্যাচার চলে। দুদিন পর নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রভাবশালী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে চলে এই নির্যাতন। 

জানা যায়, গোলাম মোস্তফার মেয়ের মোবাইল চুরি হয় গত বুধবার। চোর সন্দেহে পরের দিন ভোরে ধরে আনা হয় পাশের চর গোবিন্দপুর গ্রামের দোলোয়ার হোসেনের ছেলে রাকিব (১২), একই গ্রামের জাহির মিয়ার ছেলে ফয়সালকে (১৭) । তারপর তাদের বেঁধে চলে নির্যাতন।

নির্যাতনের সময় ইউনিয়ন পরিষদের সদস‌্যসহ স্থানীয় অনেকে উপস্থিত থাকলেও প্রতিবাদ করেননি কেউ। পরে চুরির অভিযোগে কিশোর ফয়সালকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় নির্যাতনকারীরা এবং রাকিবকে ছেড়ে দেয়।

পুলিশ বৃহস্পতিবারই কিশোর ফয়সালকে চুরি মামলায় আদালতে পাঠায়। ঘটনার দুইদিন পর কিশোরদের মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শনিবার গভীর রাতে নির্যাতনকারী দুই জনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন চর ভবানীপুর এলাকার গোলাম মোস্তফা (৪৫) ও সফির উদ্দিন (৫০) ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ৯৯৯ এ কল করে জানানো হয়, চোর আটক করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর ফয়সালকে থানায় এনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
ওসি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় দুই কিশোর ফয়সাল ও রাকিবকে রশি দিয়ে বেঁধে পেটানোর বিষয়টি জানতাম না। পরে বিষয়টি শুনে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মোস্তফা ও সফির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে মামলা নেয়ার জন্য ফয়সাল ও রাকিবের অভিভাবককে থানায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রযোজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 
ফয়সালের বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে ফয়সালের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে চুরি করেনি। তারপরও আমার ছেলেকে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছে। ছেলেকে মারধরের বিচার চাই।’

নির্যাতিত কিশোর ফয়সালের দাদি কমলা খাতুন বলেন, ‘চোখের সামনে আমার নাতিকে মারধর করেছে। আমি তাদের পায়ে ধরেছি, তবুও তারা মানেনি। আমার নাতি কোন অপরাধ করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছি। মানুষকে এমনভাবে কেউ মারে না। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে গেছে, আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি।’

মানবাধিকার কর্মী অ‌্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু এই বিষয়ে বলেন, ‘কোন ব্যাক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধ করে, তবে দেশে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তবে সেটিও অপরাধ। চুরির অপবাদে কিশোর নির্যাতন- সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। নিশ্চয়ই নির্যাতনকারীদের বিচার হবে।’

মিলন/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়