ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাজু বিবির চোখে আনন্দ-অশ্রু

মাগুরা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:৫১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
মাজু বিবির চোখে আনন্দ-অশ্রু

বয়স ৯০ বছর। স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সরকারের ঘোষণা ও নীতিমালা অনুযায়ি মাজু বিবি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার দাবিদার।

অথচ ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করেও একটি ভাতার কার্ড পাননি তিনি। অনেকের পেছনে ঘুরেছেন ভাতা কার্ডের জন্য। সবার একই কথা ভাতা কার্ড পেতে টাকা দিতে হবে। একটা সময় মাজু বিবি হাল ছেড়ে দেন- তার টাকা নেই বলে ভাতা কার্ড হবে না।

অবশেষে মাজু বিবি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানূর রহমান ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের উদ্যেগে তিনি একটা বিধবা ভাতা কার্ড হাতে পেয়েছেন। চলতি মাসে ৬ হাজার টাকাও তুলেছেন তিনি। জীবন সায়হ্নে এসে ভাতা কার্ড পাওয়াতে মাজু বিবির মুখে হাসির ঝিলিক ও চোখে আনন্দ-অশ্রু দেখা গেছে। 

মাজু বিবির বাড়ি উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের শির গ্রামে। তিনি মৃত জব্বার মোল্যার স্ত্রী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাজু বিবি জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পায়ের দুটি পাতা মোড়ানো। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ৮৩ বছর। বাস্তবে বয়স ৯০ এর ওপরে বলে জানান প্রতিবেশীরা। স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে। 

স্বামী মারা যাবার পর অন্যের বাড়িতে পেটে-ভাতে খেয়ে কাজ করে দিন চালাতেন। বয়সের কারণে  এখন আর কাজ করতে পারেন না। একমাত্র ছেলে দিদার মোল্যার ওপর তিনি নির্ভরশীল। দিদার পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে মা-স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে সংসার চালান। সম্পত্তি বলতে চার শতাংশ জমির ওপর একটি চার টিনের চাল আর পাটকাঠির বেড়ার ভাঙাচোরা ঘরে তাদের বসবাস। পুরনো টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানি ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়েছে পলিথিন।

চার যুগের বেশি সময় বিধবা মাজু বিবির খোঁজ নেয়নি কেউ। খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে কেটেছে তাঁর দিন।

স্থানীয় বাসিন্দা কবি আকাহিদ হোসেন মাজু বিবির বিষয়টি ইউএনও মো. মিজানূর রহমান ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের নজরে আনেন। তাৎক্ষণিক তারা ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।

মো. জয়নুর রহমান বলেন, ‘মাজু বিবি ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তার মতো অসহায় একজনের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে।’ 
মাঝু বিবির একমাত্র ছেলের বউ তহমিনা (৪০) জানান, পূর্বে অনেকেই কার্ড করে দিতে চেয়েছেন কিন্তু বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন। টাকা দিতে না পারায় কোনও সরকারি সুবিধা আমরা পাইনি।

প্রতিবেশী সউদ মোল্যা (৭৫) জানান, মাঝু বিবির সংসার বড় কষ্টে চলে। যখন জানতে পারলাম তার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে তখন খুব ভাল লেগেছে।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জয়নুর রহমান বলেন, ‘মাঝু বিবির আবেদনের তালিকা যখন আমার হাতে আসে তখন অবাক হয়েছিলাম। শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, এমনকি বয়স্ক ভাতা সকল সুবিধার যে কোনও একটি তার অনেক আগেই পাবার কথা ছিল। অবশেষে আমরা কার্ডটি করে দিয়েছি।’

ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার দরিদ্র মানুষের সঠিক পাওনাটা বুঝিয়ে দিতে সকল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেছে। সরকারের দেওয়া সকল সুবিধা সুন্দরভাবে মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। যদি কেউ বাদ পড়ে থাকে তাহলে তারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে সুবিধা প্রদান করা হবে।’

শাহীন/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়