ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লাখাইবাসীর দুঃসহ স্মৃতির দিন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  
লাখাইবাসীর দুঃসহ স্মৃতির দিন

১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাবাসীদের এক দুঃসহ স্মৃতির দিন।  ১৯৭১ সালের এইদিনে লাখাই’র কৃষ্ণপুর গ্রামে সংঘটিত পাকিস্তানি হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ ও নারকীয় তাণ্ডব অনেকের কাছে আজো দুঃস্বপ্ন।

ভোরে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙার আগেই লাখাই’র প্রত্যন্ত অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দূর্গম কৃষ্ণপুরে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ও কতিপয় আলবদর বাহিনীর সদস্যের সহযোগীতায় ১০/১২ জন সেনা অষ্টগ্রাম ক্যাম্প থেকে স্পিডবোট যোগে প্রবেশ করেন।  তারা  ঘেরাও করে ফেলেন কৃষ্ণপুর গ্রামের গদাইনগর, চন্ডিপুর, লালপুর, গকুলনগর, গংগানগর, সিতারামপুরসহ বিভিন্ন পাড়া।  এ সময় তাদের দাপটে কেঁপে উঠে কৃষ্ণপুরের মাটি।  রুপ নেয় ভয়ানক পরিস্থিতি। তাদের হত্যাযজ্ঞ চলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।

হানাদাররা নিরীহ লোকদের ঘুম থেকে তুলে এনে কৃষ্ণপুর গ্রামে ননী গোপাল রায়ের বাড়ির পুকুরের ঘাটলা সংলগ্ন পাকা জায়গায় ও গদাইনগর গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়ির উঠানসহ চন্ডীপুর গ্রামের তিনটি স্পটে একত্রিত করেন।  এ সময় অনেকেই পানিতে থাকা কচুরীপানার মধ্যে, ঘরের গোপনস্থানে, বাড়ি ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করেন। 

সেদিন হানাদারদের ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারান- কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা কালী দাস রায়, ডা. ননী রায়, রাধিকা মোহন রায়, গোপী মোহন সূত্রধর, সুনীল শর্মা, মুকুন্দ সূত্রধর, যোগেন্দ্র সূত্রধর, মহেন্দ্র রায়, অনিল মাঝি, চন্দ্র কুমার রায়, জয় কুমার রায়, শান্ত রায়, কিশোর রায়, ননী চক্রবর্তী, সুনিল চক্রবর্তী, ব্রজেন্দ্র দাস, জগদীশ দাস, ইশান দাস, ধীরেন্দ্র রায়, হরিচরণ রায়, মদন রায়, দাশু শুক্ল বৈদ্য, হরি দাশ রায়, শুকদেব দাস, অবিনাশ রায়, রামাচরণ রায়, শৈলেস রায়, ক্ষিতিশ গোপ, নীতিশ গোপ, হীরা লাল গোপ, প্যারি দাস, সুভাষ সূত্রধর, প্রমোদ দাস, সুদর্শন দাস, গোপাল রায়, দীগেন্দ্র আচার্য্য, রেবতী রায়, শবরঞ্জন রায়, দীনেশ বিশ্বাস, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, রস রাজ দাস, জয় গোবিন্দ্র দাস, বিশ্বনাথ দাস, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, মহাদেব দাশ, মহেশ দাসসহ ৪৫ জন।  বিভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় নেয়া নিরীহ লোকজনও সেদিন এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।  সব মিলিয়ে ১২৭ জন সেদিন প্রাণ হারান।  বলভদ্র নদীপাড়ের হাওর লাশের স্তুপে পরিণত হয়।  চলে ধর্ষণ ও লুটপাটও।

এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা অমরেন্দ্র লাল রায় বলেন, কৃষ্ণপুরে প্রবেশ করে ননী গোপাল রায়ের ঘাটলায় বসে পাক কমান্ডার এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেন।  পরে তারা চলে গেলে একে একে ১২৭ জনের মৃতদেহ একত্র করে গণকবর দেয়া হয়। 

হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ২০১২ সালে ১৭ ডিসেম্বর কৃষ্ণপুরের শহীদদের স্মরণে বধ্যভূমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

কৃষ্ণপুর কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত কৃষ্ণপুর গ্রামের ৪৭জনের স্মরণে স্কুল প্রাঙ্গণেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

মামুন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়