ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জনপ্রিয় হয়েছে ধাপের ওপর সবজি চাষ

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:৫৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
জনপ্রিয় হয়েছে ধাপের ওপর সবজি চাষ

গোপালগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেড বা ধাপের ওপর সবজি চাষ। জলাভূমি এলাকায় কচুরিপানা দিয়ে ধাপ তৈরি করে কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চাষ করছেন।

এতে এলাকার সবজির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি নিজেদেরও আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিম্নাঞ্চল। বৃষ্টি-বন্যায় এসব এলাকা পরিণত হয় জলাভূমিতে। বলা যায়, এসব এলাকায় বছরের ৮ মাসই ফসল ফলানোর উপায় থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে বেড বা ধাপের ওপর সবজি চাষ এখানে বিকল্প উপায় হয়ে উঠেছে। 

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোপালপুর, বন্যাবাড়ী, মিত্রডাঙ্গা, জোয়ারিয়া, সদর উপজেলার গোবরা, কাঠি, মাঝিগাতি, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি, ধারাবাশাইল, মাচারতারা, নয়াকান্দি, ডুমুরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা একত্রিত করে তিন থেকে পাঁচ ফুট চওড়া এবং ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এক-একটি ধাপ তৈরি করে সবজি চাষ করছেন।

একজন কৃষক ৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত ধাপ তৈরি করে সেখানে শশা, ঢেরশ, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি, কুমড়া, হলুদসহ প্রায় ১৬ রকমের সবজি ও মসলার আবাদ করছেন। পুরুষদের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারীরাও। 

স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ধাপের ওপর সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  অধিক লাভে সবজি বিক্রি হওয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাচ্ছে।

একজন কৃষকের দেওয়া হিসাব মতে, একটি ধাপ তৈরি ও বীজ রোপন মিলিয়ে ৭শ টাকার মত খরচ হয়। প্রকার ভেদে প্রতিটি ধাপ থেকে খরচ বাদে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে তাদের। এছাড়া শীতের সময় এসব ধাপ জমিতে প্রাকৃতিক সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

অন্যদিকে, এসব সবজিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করায় ক্রেতাদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। পাইকাররা বাড়িতে গিয়ে এসব সবজি কিনে নেয়ায় বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনের জন্য ১২ হাজার ৫৬৭টি ও চারা উৎপাদনের জন্য ৫৯০টি ধাপ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২০০, মুকসুদপুর উপজেলায় ৫৫০, কাশিয়ানী উপজেলায় ১২০, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৬২০০ ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৫০৮৭টি ধাপ তৈরি করা হয়েছে। এসব ধাপে ঢেঁড়শ, ডাটাশাক, লালশাক, ঝিঙ্গে, করলা, পুইশাক, কুমড়া, লাউ, পানিকচু, মরিচ, চিচিঙ্গা, হলুদ আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। আর কৃষক উৎপাদিত সবজির ভাল দাম পাচ্ছেন। ধাপের ওপর সবজি চাষ করছেন জেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক। এ পদ্ধতিতে জেলায় ৮৫৫ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া মিত্রডাঙ্গা গ্রামের পিযুষ বিশ্বাস, নির্মলা বিশ্বাস ও শক্তি কীর্ত্তনিয়া এরা বললেন, বর্ষার সময় এখানে কোনো কাজ থাকে না। এ সময় কচুরিপানা দিয়ে ধাপ তৈরি আমরা সবজি চাষ করি।

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষি হুমকির মুখে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ একটি টেকসই পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যদি সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা যায় তাহলে কৃষিতে ঘাটতি কমবে। গোপালগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় কম। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয় না।

গোপালগঞ্জ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়