ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়কে যে কারণে যানজট

আবু কাওছার আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:৪৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়কে যে কারণে যানজট

জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা এই ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে চারলেনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা দুর্ভোগ লেগেই আছে।

চার লেনে উন্নীতকরণের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রকল্পটির জন্য শুরুতে বাজেট ধরা হয়েছিলো ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। সে সময়সীমা বেড়ে হয়েছে চলতি বছরের জুন। সে সময়ও পেরিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ সময়সীমা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ২০টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ উন্নত করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত এতে তিনবার সংশোধন হয়েছে এবং মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। চতুর্থ বারের সংশোধনী অনুমোদিত হলে প্রকল্পটির ব্যয় আরো বেড়ে যাবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘসময় কাজ বন্ধ থাকা এবং ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতাই ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ।

জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। কাজ হচ্ছে চার প্যাকেজে। এর মধ্যে ৪ নম্বর প্যাকেজে পড়েছে এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের ১০ কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএলের এ অংশের নির্মাণকাজ করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড।

তৃৃতীয় প্যাকেজে দুল্লামারী রোড থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪০ কিলোমিটারের কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান ও বাংলাদেশের মীর আখতার।

দ্বিতীয় প্যাকেজে টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারের কাজ করছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং।

মহাসড়কের বেশিরভাগ আন্ডারপাসের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় ওই স্থানগুলোতে তীব্র যানজট হয়। এরপর ওই স্থানগুলো থেকে সৃষ্টি হওয়া যানজট আরো দীর্ঘ হতে থাকে। ফলে এই মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

এছাড়া এ সড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বড়বড় গর্তের। এতে চরম বিপাকে পড়েছে মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনের চালকেরা। ফলে প্রতিনিয়তই ওই স্থানটিতেও যানবাহন বিকল হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। তবে ইট দিয়ে এই গর্ত ভরাটের জন্য কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

সরেজমিন গোড়াই এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, গর্তগুলো একদিন মেরামত করলেও ২/৩দিন পর আবার আগের মতো হয়ে যায়। তখন আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোন খোঁজ থাকে না। দায়সারাভাবে কাজ করার কারণেই এ গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন ভূক্তভোগিরা।

উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী বিনিময় পরিবহনের চালক আমিনুল ইসলাম জানান, গোড়াই এলাকায় মহাসড়কের যে বেহাল অবস্থা তাতে ওই স্থানটি পাড়ি দিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে যায়। আর সেটি মেরামত করতে দীর্ঘ সময় লাগায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়।

টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী নিরালা সুপার সার্ভিসের চালক সোলায়মান হাসান জানান, চার লেনের কাজ শেষ না হওয়ায় এবং গোড়াই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বড় বড় গর্তের কারণে মাঝে মাঝে যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এক মিনিটের রাস্তা পারি দিতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এ কারণে প্রতিনিয়তই এই স্থানটির ৬/৭ কিলোমিটারের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পরে থাকতে হয়।

মহাসড়কের ওইস্থানে কেন নিত্যদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তা দেখতে সোমবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চারলেন প্রকল্প পরিচালক মো. ইসহাক হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মো. ইসহাক হোসেন জানান, মহাসড়কের গোড়াই এলাকায় ৩৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.২ মিটার প্রস্থ উড়াল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু মহাসড়কের ওই স্থানের উভয় পাশের হুকুম দখলকৃত জমির মূল্য এখনও পরিশোধ হয়নি। এজন্য মহাসড়কের উভয় পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকগণ তাদের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে বিলম্ব করছেন। সার্ভিস লেন তৈরি না করেই উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে যানচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে নিত্যদিন এই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে যানজটের কারণে উড়াল সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না। এ জন্য কিছু কর্মী ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেয়ার কথা জানান তিনি।

টাঙ্গাইল/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়