ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাঁসেই খুলছে যুবসমাজের ভাগ‌্য, বাড়ছে খামার

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  
হাঁসেই খুলছে যুবসমাজের ভাগ‌্য, বাড়ছে খামার

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বেশ কিছু যুবক করোনার সময়ে হাঁস চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে তারা খামার করে এ সাফল্য পান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে তাদের আরও উদ্বুদ্ধ করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসও।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের সুমন আহম্মেদ। করোনার সময়ে ঢাকায় চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে শুরু করেছেন হাঁসের খামার। এখন বেশ সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

খামারী সুমন বলেন, ‘বাড়িতে আসার পরে ভাবলাম, বসে না থেকে কিছু একটা করি। বাড়ির পাশে একটা পুকুর রয়েছে, পুকুরের পাড়েই হাঁসের জন্য ঘর করলাম। পুকুরসহ কিছু জমি তারের নেট দিয়ে ঘিরে ৬০০ ক্যাম্বেল জাতের হাঁস কিনে খামার শুরু করেছি। বর্তমানে আমার খামারে ১৮৫০টি হাঁস রয়েছে। এগুলো দেখা শোনার করার জন্য আমি ছাড়াও আরও তিনজন এই খামারে কর্মরত রয়েছে। হাঁস পালন খুবই লাভজনক। অল্প দিনেই লাভবান হওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, “হাঁসের তেমন রোগবালাই নেই। শুধুমাত্র একটু সতর্ক থাকলেই হাঁস পালন করা সম্ভব। আমার হাঁসের খামারটি আরও বড় করার চিন্তা করছি। এতে আমিও আর্থিকভাবে লাভবান হবো এবং এলাকার অনেকের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে।’

পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি জিহাদ আলীও হাঁস পালন করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন।

জিহাদ আলী বলেন, ‘করোনার শুরুতে খুব কষ্ট করেছি। কাজ-কাম নেই, বাড়িতে বসে থাকা। মাঠের কাজও পারি না। তারপর একদিন ইউটিউব দেখতে দেখতে হাঁস পালন দেখি। সেখানে কীভাবে খামার করতে হয়, সেটা দেখলাম। ঠিক করলাম, আমিও হাঁসের খামার করবো। তবে হাঁস পালন সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলো না। যেটুকু ছিলো, সেটা ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। পরে মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সোহাগ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি হাঁস পালন সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। পরে আমি হাঁসের বাচ্চা এনে খামার করেছি। এখন বেশ লাভবান হচ্ছি।

হাঁস পালন সম্পর্কে জিহাদ আরও বলেন, ‘হাঁসের বাচ্চাকে প্রথমে ফিড খাবার খাওয়াতাম। তারপর দিনে মাঠে চরাতাম, যাতে খাবার কম লাগে এবং দ্রুত বড় হয়। এখন গম, ভুট্টা, ধান, ধানের কুড়া, খুদ এসব খায়। হাঁস পালন খুবই লাভজনক। যে কোন চাকরি বা ব্যবসার চেয়ে খুবই কম সময়ে লাভবান হওয়া যায়।’

সদরপুর এলাকার সাকিব জানান, ‘অল্প পুঁজিতে খুব সহজেই হাঁস পালন করা যায়। আমরা বেকার চার বন্ধু মিলে এই হাঁস পালন শুরু করেছি। আর এই করোনার সময়ে আমরা ৪০০ হাঁস প্রতিটি ৩০ হিসাবে কিনে দুই মাস পরে ২০০ টাকা হিসাবে বিক্রি করেছি। আবার নতুন করে ১০০ বাচ্চা এনেছি।’

সেলিম হোসেন জানান, “আমি হাঁস ও মাছের মিশ্র চাষ করেছি। এতে আমার হাঁসের বেশি খাবার দিতে হয় না, আবার মাছেরও বাড়তি খাবার কম লাগে। বর্তমানে আমি ২০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাঁস-মাছের চাষ করছি। বর্তমানে আমার খামারে ১০৫০টি সাড়ে তিন মাস বয়সী হাঁস রয়েছে। যার প্রতিটির বাজার মুল্য ২০০-৩০০ টাকা করে।’

মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় মোট হাঁসের খামার রয়েছে ৫৭টি। খামার এবং বাড়িতে প্রায় ৭৬ হাজার হাঁস পালন করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে উপজেলায় ৩৩টি হাঁসের খামার ছিলো, যেখানে খামার এবং বাড়িতে প্রায় ৪১ হাজার হাঁস পালন করা হয়েছিলো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সোহাগ রানা জানান, ‘হাঁস পালন খুবই লাভজনক। মুরগি পালনের চেয়ে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। বিশেষ করে খামারীদের পছন্দ খাঁকি ক্যাম্বেল হাঁস। এ জাতের একটি হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। বর্তমানে মিরপুর উপজেলার অনেকেই হাঁসের খামার করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারীদের খামার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছি। তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে হাঁসের বিভিন্ন রোগের টিকা সরবরাহ করি।’

 কুষ্টিয়া/কাঞ্চন/সাজেদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়