ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা (ভিডিও)

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:৩১, ২ অক্টোবর ২০২০
প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা (ভিডিও)

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ।

তাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। এর মধ্যে খড়, মাটি আর দো-আঁশ মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি কাজ শেষ হয়েছে। তবে এবছর করোনাভাইরাসের কারণে জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকেরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় রেকর্ড ১ হাজার ১৯৮টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় ৩১৩টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৮৫টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৭১টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৭টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯২টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হবার পরপরই গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এ বছর ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠিকতা। চলবে আগামী ২৬ আক্টোবর পর্যন্ত। এবছর মহাষষ্ঠীতে দোলায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন আর পূজার সকল আনুষ্ঠিকতা শেষে গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশে ফিরবেন দেবী দূর্গা। কয়েকদিন পড়েই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।

এরমধ্যে মন্দিরগুলোতে খড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠছে প্রতিমা। এখন চলছে দো-আঁশ মাটির কাজ। আর এসব প্রতিমা তৈরিতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। এরপর রঙ তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী মা দুর্গা তার সঙ্গে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সঙ্গে দেবতা কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবেন নিপুন হাতের ছোঁয়ায়।

এ বছর এক-একজন প্রতিমা শিল্পীরা ৪ থেকে ৮টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। তবে করোনাকালীন সময়ে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছন তারা।

এদিকে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবছর জাঁকজমকভাবে পূজার আয়োজন করছেন না আয়োজকেরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের প্রতিমা ও পূজা দেখার ব্যবস্থা করছেন তারা। মন্দিরগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকলেও থাকবে না সড়কগুলোতে।

প্রতিমা শিল্পী পঞ্চনন পাল, রনজিৎ পাল, রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, এবছর এক একজন ভাস্কর ৪ থেকে ৮টি করে প্রতিমা তৈরি করছেন। পূঁজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ-এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে করোনাকালীন চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও তারপরেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

আয়োজক ভজন কুঁড়ি, দুলাল বিশ্বাস ও টিটু বৈদ্য জানান, এর মধ্যে আমরা পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি পেয়েছি। এতে স্বাস্থ্য মানার পাশাপাশি শুধুমাত্র মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। তবে এবার সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা, গান-বাজনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যারা প্রতিমা দেখতে আসবেন তাদের জন্য তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মনে চলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, ‘এর মধ্যে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আলোচনা হয়েছে। এবছর শুধু মাত্র মন্দিরের মধ্যে আলোকসজ্জা করা হবে। বাইরের সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা, গান বাজনাসহ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। প্রতিটি মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানান, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আইন শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী আগের মত এ বছরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জেলা গোপালগঞ্জে এবছর নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

বাদল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়