ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঝিনাইদহে চাষ হচ্ছে মনিপুরি ইলিশের

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৭:৩৫, ৩ অক্টোবর ২০২০
ঝিনাইদহে চাষ হচ্ছে মনিপুরি ইলিশের

ঝিনাইদহের মহেশপুরের প্রায় অর্ধশত পুকুরে চাষ হচ্ছে ইলিশের।  চাষিরা বলছেন, মনিপুরি ইলিশ।

মহেশপুর উপজেলার বাশবাড়িয়া ও পান্তাপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের এসব পুকুরে ছাড়া হয়েছে মনিপুরি ইলিশের ১২ লাখ পোনা।  তাও প্রায় ২ মাস হয়ে গেছে।   চাষিরা আশা করছেন ৭ থেকে ৮ মাস বয়স হলেই বাজারে তুলতে পারবেন।

মাছটি দেখতে মাথার অংশ ইলিশের আর পেছনের অংশ পুটি মাছের মতো কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে পুরোটাই ইলিশ।  অনেকে মাছটিকে পেংবা বলেও চেনেন।

মহেশপুরের মৎস্য চাষিরা বলছেন, এ বছরই তারা প্রথম এই মনিপুরি ইলিশের চাষ করেছেন।  মিঠাপানিতে উৎপাদিত এই মাছ বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি হলে ইলিশের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে।

মৎস্য বিভাগ বলছেন, তারাও আশাবাদি এই মাছ চাষে ইলিশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চাষিরাও লাভবান হবেন।

মৎস্যচাষিদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, মহেশপুর উপজেলায় পান্তাপাড়া গ্রামের আলিউজ্জামান প্রথম এই মনিপুরি ইলিশটি তাদের এলাকায় নিয়ে আসেন।  এর পূর্বে কেউ এই মাছের চাষ সম্পর্কে বুঝতেন না। 

তুলসীতলা গ্রামের মৎস্যচাষি আব্দুল আলিম জানান, বাশবাড়িয়া ইউনিয়নের পান্তাপাড়া, তুলসীতলা ও বাগানমাঠ গ্রামের অর্ধশত পুকুরে মনিপুরি ইলিশের চাষ হয়েছে।  আলিউজ্জামান প্রথম মাছটি এই এলাকায় নিয়ে আসলেও বর্তমানে আয়াত আলী, আত্তাব আলী, সজিব হোসেন, ওসমান গণী, জায়েদ আলী, আব্দুর রহিম, নয়ন মিয়া, সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, ইদ্রিস আলী, মনিরুল ইসলাম, মকছেদ আলী, জুলমত আলীসহ বেশ কয়েকজন মৎস্যচাষি এই মাছের চাষ করেছেন।

আব্দুল আলিম আরো জানান, তিনি ৪ বিঘা আকারের একটি পুকুরে ৬০ হাজার পোনা ছেড়েছেন। প্রতিটি পোনার দাম পড়েছে ১ টাকা ৫৫ পয়সা।  পুকুরে পোনা ছাড়ার সময় কেজিতে ৫ হাজার বাচ্চা ছিল, যা এরই মধ্যে অনেক বড় হয়েছে।  বর্তমানে ৩৫টি মাছে এক কেজি ওজন হচ্ছে। 

তিনি জানান,  বয়স ৭ থেকে ৮ মাস হলেই এই মাছ বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।  তখন একটি মাছের ওজন হবে ৪ থেকে ৬ শ গ্রাম।

তিনি বলেন, অন্য সব মাছের মতোই এর খাবার দিতে হয়, তবে খাবার একটু বেশি প্রয়োজন হয়। এই মাছ দ্রুত বড় হয়, যে কারণে তাদের খাবারও বেশি প্রয়োজন হয়।

মহেশপুরে মনিপুরি ইলিশের পোনা নিয়ে আসা আলিউজ্জামান জানান, মাছটি ভারতের মনিপুরি রাজ্যে চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে।  সেখানে ৮ শ থেকে ৯ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  সেখানে জামাই ষষ্ঠীতে এই মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকে।  সেখান থেকে ময়মনসিংহের একটি হ্যাচারি মালিক ২০১৯ সালে মা মাছ সংগ্রহ করেন।  এরপর সেই মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাচ্চা তৈরি করেছেন। এই বাচ্চা সংগ্রহ করে তিনি নিজ এলাকায় নিয়ে আসেন।  বর্তমানে তার পুকুরে ২ লাখ পোনা বড় হচ্ছে।

বাগানমাঠে পুকুর করে মাছ চাষ করছেন আনোয়ার হোসেন।  এই মৎস্যচাষি জানান, মনিপুরি ইলিশ নিয়ে তিনি আশাবাদী।  তিনি আশা করছেন- ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলেই লাভবান হবেন তারা।

ময়মনসিংহ জেলার বন্ধন হ্যাচারির মালিক কামাল হোসেন জানান, তারা এ বছর পেংবা মাছের পোনা ছেড়েছেন।  প্রায় ১৫ লাখ পোনা বিক্রি করেছেন।  যার বেশির ভাগই ঝিনাইদহে বিক্রি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মাছটি একেবারেই নতুন জাত।  যে কারণে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তিনিও।  তবে ভারতে মনিপুরি ইলিশ হিসেবে ব্যপক প্রচলিত রয়েছে মাছটি।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, মাছটি চাষিরা সংগ্রহ করলেও তারা সার্বক্ষনিক দেখভাল করছেন।  

ঝিনাইদহ/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়