ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পূর্বধলায় পূজা উদযাপনে করোনার প্রভাব: রাস্তায় হবে না আলোকসজ্জা 

শফিকুল আলম শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৮:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০২০
পূর্বধলায় পূজা উদযাপনে করোনার প্রভাব: রাস্তায় হবে না আলোকসজ্জা 

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় এবার ৫৪ মন্দিরে উদযাপিত হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকরা। তবে এ বছর মন্দিরের ভেতরে আলোকসজ্জা থাকবে শুধু। করোনা পরিস্থিতিতে মন্দিরের সামনের সড়কে আলোকসজ্জা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি।

পূর্বধলা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পূর্বধলা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে ৫৪টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পূর্বধলা সদর ইউনিয়নে ৯টি, আগিয়া ইউনিয়নে ৮টি, হোগলা ইউনিয়নে ১১টি, ঘাগড়া ইউনিয়নে ২টি, জারিয়া ইউনয়নে ৩টি, ধলামূলগাঁও ইউনিয়নে ২টি, খলিশাউড় ইউনিয়নে ৪টি, নারান্দিয়া ইউনিয়নে ৭টি, গোহালাকান্দা ইউনিয়নে ৭টি ও বিশকাকুনী ইউনিয়নের ১টি মন্দিরে এ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। 

উপজেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হবার পরপরই গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এ বছর ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবীবোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। চলবে আগামী ২৬ আক্টোবর পর্যন্ত। এবছর মহাষষ্ঠীতে দোলায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন আর পূজার সকল আনুষ্ঠিকতা শেষে গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশে ফিরবেন দেবী দূর্গা। কয়েকদিন পড়েই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম। এর মধ্যে মন্দিরগুলোতে খড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠছে প্রতিমা। এখন চলছে দো-আঁশ মাটির কাজ। আর এসব প্রতিমা তৈরিতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। এরপর রঙ তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন প্রতিমা শিল্পীরা। 

এদিকে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবছর জাঁকজমকভাবে পূজার আয়োজন করছেন না আয়োজকেরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের প্রতিমা ও পূজা দেখার ব্যবস্থা করছেন তারা। মন্দিরগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকলেও থাকবে না সড়কগুলোতে।

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি সভাপতি তরুণ কুমার রায় ও সম্পাদক সঞ্চিত কর জানান, ‘এর মধ্যে আমরা পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি পেয়েছি। এতে স্বাস্থ্য মানার পাশাপাশি শুধুমাত্র মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। তবে এবার সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা, গান-বাজনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে। যারা প্রতিমা দেখতে আসবেন, তাদের জন্য তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

পূর্বধলা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের মতো এ বছরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির পূর্বধলায় এবছর নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

প্রতিমা শিল্পী স্বপন পাল, শম্ভু পাল, অধর পাল জানান, এবছর এক একজন ভাস্কর দুই/তিনটি করে প্রতিমা তৈরি করছেন। পূঁজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙের কাজ করতে হবে তাদের। তবে করোনাকালীন চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান, তা দিয়ে জীবন-যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও বাপ-দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা। 

পূর্বধলা/শাহীন/সাজেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়