ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জনবল সংকটে ধুঁকছে কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলো

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১০:৪৭, ১৬ অক্টোবর ২০২০
জনবল সংকটে ধুঁকছে কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলো

কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলো ‘ধুঁকছে’ নানা সংকটে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব হাসপাতালের কোথাও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, কোথাও বা নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। এতে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

জনবল সংকটে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
কার্যক্রম সবই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসাবে।  রয়েছে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম। হচ্ছে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা কার্যক্রম।  তবে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মচারীর মোট পদ রয়েছে ১৯৩টি।  এর মধ্যে হাসপাতালে পদায়ন রয়েছে ১৩৯টি পদে।  শুন্য পদ হিসেবে রয়েছে ৫৪টি।  হাসপাতালে ৫ জন কনসালটেন্ট এর পদ থাকলেও প্রত্যেকটিই শুন্য। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৪৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন।  সোমবার (১২ অক্টোবর) হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ জন। এর মধ্যে ১৭ জন পুরুষ এবং ৩১জন নারী।  তবে করোনা ওয়ার্ডে বা আইসোলেশনে কোনো রোগী ভর্তি পাওয়া যায়নি।

কুমারখালী হাসপাতালের ছয় নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডে মাথায় আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চার দিন আগে এসেছি।  একটা করে বড়ি রোজ দেয়।  আর একটা ইনজেকশন সেটা দুই ভাগ করে দুই দিন দিয়েছে।  অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই।

মহিলা ওয়ার্ডের একজন নারী রোগীর বাবা আসাদুল বলেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিয়েছে।  ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, হাসপাতালে সিন্ডিকেট আছে।  তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।   স্থানীয়রা জানান, একজন কর্মকর্তা এখানে দীর্ঘদিন থাকায় একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। হাসপাতালের বাইরে ফিটফাট কিন্তু ভেতরে কিচ্ছু নেই।

এদিকে, খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রোগীর স্বজনরা। তাদের দাবি, খাবার এত নিম্নমানের যে রোগীরা এগুলো খেতে পারে না।  হাসপাতালের বাবুর্চি রনজিত বলেন, কর্তৃপক্ষের করে দেওয়া সিডিউল মতো আমি রান্না করি।  খাবারের মান নিয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি।

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিন বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবার মান খুবই ভালো। তবে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় খুব অসুবিধায় আছি। ৫০ শয্যার হাসপাতাল কিন্তু চলছে ৩১ শয্যার ম্যানপাওয়ার দিয়ে।

তিনি বলেন, হাসপাতালের এক্স-রে সচল, ওটি রয়েছে ভালো মানের। তবে ৫ জন কনসালটেন্ট ডাক্তারের পদ ফাঁকা থাকায় অপারেশন রোগীদের কুষ্টিয়ায় পাঠিয়ে দেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা বাইরে থেকে ডাক্তার এনে অপারেশন করাতে হয়।

তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসা সেবার জন্য আমরা আলাদা কর্ণার রেখেছি। সেখানে নমুনা গ্রহণ করে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পাঠায়। আর হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। সবই সাজানো গোছানো তবে দ্রুত লোকবল পেলে চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়বে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খাঁন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শুন্যপদ পূরণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খাঁন বলেন, এখানে দালালদের কোনো দৌরাত্ব নেই। তবে পর্যাপ্ত জনবল নেই। জনবল পর্যাপ্ত না হওয়ায় চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ব্যঘাত ঘটে।

খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে নানা অভিযোগ
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বেলা ২টা।  কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ।  গিয়ে দেখা গেলো বেশ কয়েকজনের জটলা।  চলছে দর দাম, ‘ভাই গরীব টরিব বুঝি না, ১২৫ টাকার ২৫ পয়সা ও কম হবে না।  প্রতি উত্তরে এক রোগীর স্বজন বলেন ভাই একটু কম নেন, গরীব মানুষ।  এটা তো সরকারি হাসপাতাল।’ 

জানা যায়, উপজেলার একমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এটি।  হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলেও এখনো দেওয়া হয়নি ৫০ শয্যার লোকবল।  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হয় না।  বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থেকে কিনতে হয়।

আব্বাস উদ্দিন নামের একজন রোগীর বলেন, ‘হাসপাতালে এক্স-রে করা যায় না।  আমি বাইরে থেকে করে আনলাম। ৩০০ টাকা নিয়েছে। তবে ডাক্তার দেখে বললেন এটা হবে না, কুষ্টিয়া থেকে এক্স-রে করে আনতে হবে।  এখান কার এক্স-রে টা ভালো বোঝা যাচ্ছে না।’
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, ‘হাসপাতালে লোকবল কম। এই সুযোগে বাইরের লোকজন এসে প্রভাব খাটায়। ’ হাসপাতালের দালালদের দৌরাত্বের কথা স্বীকার করেন খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান সোহেল।

তিনি বলেন, ‘বাইরের দালাল দেখা যায়। এরা ঐ ছোট খাটো এক্স-রে, ইসিজি, আল্টা সনো, ডিজিটাল এক্স-রে করানোর জন্য আসেন।  হাসপাতালে এক্স-রে বন্ধ দুই বছর ধরে লোকবলের অভাবে।’

তিনি বলেন, হাসপাতালে ৫০ শয্যার সব ব্যবস্থা থাকলেও নেই লোকবল।  যে কারণে রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 
খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ হাসপাতালের বিষয়টি অন্যরা দেখেন।’

খোকসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ইসাহাক আলী বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়ে অবগত নই।  ইউএনও স্যার ট্রেনিংয়ে আছেন। তিনি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’

কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ‘লোকবলের অভাবে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে বন্ধ রয়েছে এটা শুনেছি। তবে কর্তৃপক্ষ থেকে আমার কাছে লিখিত কোনো চিঠি দেয়নি। শুধুমাত্র খোকসা না এমন অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোতে লোকবলের কারণে এক্স-রে বন্ধ রয়েছে।’

কুষ্টিয়া/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়