ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘পাহাড়ে আমাদের জন্ম, মৃত্যুও যেন এখানেই হয়’

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৭ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০২০
‘পাহাড়ে আমাদের জন্ম, মৃত্যুও যেন এখানেই হয়’

পাহাড়ে আমাদের জন্ম, মৃত্যুও যেন এখানেই হয়। এ স্থানটা আমাদের কাছে খুব প্রিয়। পাহাড় রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। আমরা টিলা কাটি না, টিলা রক্ষায় কাজ করি। এরপরও প্রতি বছর টিলা ধস হচ্ছেই। এনিয়ে খুব শঙ্কায় আছি।

এভাবেই মনের দুঃখের কথা জানাচ্ছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা।

টিলা ধসে শঙ্কার কথা জানিয়ে চিত্তরঞ্জন দেববর্মা জানান, এরই মধ্যে এ টিলাতে বাস করা ২১টির মধ্যে দুই পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ‌্যে যদি এই পাহাড় সংস্কার করা না হয় তবে খুব দ্রুত এটি বিলীন হয়ে যাবে।  

সরেজমিনে দেখা যায়,  সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে চুনারুঘাটের সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লী। এ বছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে এ পল্লীতে টিলা ধসের ঝুঁকি আরও  বেড়েছে। ফলে এ টিলায় বাস করা মানুষের মাঝে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছেই।  

কিন্তু ঝুঁকি বেড়ে চললেও এ পল্লী রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ হয়নি। দিনের পর দিন সংস্কার না হওয়ায় পল্লীর পাহাড়ি টিলা ধসে পড়ছে। সেই সঙ্গে এ টিলায় বসবাস করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর সরকারি সিদ্ধান্তে বনবিভাগ আমাদেরকে বনের এক পাশে অবস্থিত সড়ক পথের কাছের টিলায় বসবাসের ঠিকানা করে দেয়। সেই থেকে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এই টিলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া থেকে বিভিন্ন চক্র নানা সময়ে বালু উত্তোলন করছে। এটিই টিলা ধসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে একদিকে, ছড়া হচ্ছে প্রশস্ত। অন্যদিকে, পাহাড়ি টিলা হচ্ছে সংকীর্ণ। এতে  আমাদের বসবাসও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।’

হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা আরও  বলেন, ‘আমাদের বসবাস পাহাড়ের টিলার ওপরে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও নির্জন পাহাড়-টিলায় বাস করে গেছেন। টিলায় বসবাস নিরাপদ মনে করি। আর সবাই মিলেমিশে একত্রে থাকি। পাহাড় রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমরা টিলা রক্ষায় কাজ করি। তবে টিলা কাটা চক্রের কাছে আমরা অসহায়। জন্মের পর থেকে দেখলাম ছড়াগুলো ছোট, এখন দিন দিন এগুলো বড় হচ্ছে। বাকি দিনে কী হবে, জানি না। আমরা এখন প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি।’

পল্লীর বাসিন্দা হারিছ দেববর্মা জানান, এর আগে বৃষ্টিপাতের কারণে ২০১৭ সালে পল্লীর টিলা ধসে যায়। সেই মৌসুমে তিন আদিবাসী পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। তারা টিলার অন্যত্র গিয়ে থাকছে। এবার আরও ২টি পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হলো। বর্তমানে পুরো টিলাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উদ্যানের অন্যান্য ছড়ায়ও টিলা ধসে পড়ছে। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ছে গাছপালা। টিলা রক্ষায় প্রাচীর নির্মাণ করা দরকার। আর তাতে বড় আকারের বাজেট প্রয়োজন।

সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন ও সাতছড়ি বিট কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন জানান, ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ উদ্যানটি বেশ প্রিয়। এখানে যাতায়াত সহজ। রয়েছে বন্যপ্রাণির বিচরণ। তবে বর্তমানে করোনায় পর্যটক আসা বন্ধ আছে। টানা বৃষ্টিতে এ পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীসহ বিভিন্ন টিলা ধসে পড়ছে। দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।

তবে এ ব‌্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)  সত্যজিত রায় দাশের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে কথা বলে সুখবর পাওয়া গেছে।

ইউএনও  সত্যজিত রায় দাশ জানান, ত্রিপুরা পল্লী রক্ষায় টিলা মেরামতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসামাত্র দ্রুত টিলা মেরামত করা হবে। এছাড়া, উপজেলা প্রশাসন থেকে পল্লীর বাসিন্দাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে থাকে।

হবিগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়