ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কবরের জায়গা পাইছি, এহন মইরাও শান্তি পামু’ 

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১০, ২১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৯:২৭, ২১ অক্টোবর ২০২০
‘কবরের জায়গা পাইছি, এহন মইরাও শান্তি পামু’ 

কমলা বিবি

‘৫২ বছর ধইরা কবর দেওয়ার জায়গা পাই নাই। সমাজের কবরস্থানে আমাগো জায়গা অয় নাই। কেউ মরলে বাড়িতেই কবর দেওন লাগতো। এতদিন পর এহন কবরের জায়গা পাইছি, এহন মইরাও শান্তি পামু।’

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকায় হাটবাসুদেবপুর গ্রামের শানদার পাড়ায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন ৮৫ বছর বয়সী কমলা বিবি। 

কমলা বিবি স্বামী হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ৩০ বছর ধরে বাস করছেন শানদার পাড়ায়। তার মতো এখানে কমপক্ষে ১৮৩টি বেদে পরিবারের বসবাস। বহু বছর আগে তারা যাযাবর জীবন ও বেদে-পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছেন। তার অধিকাংশই মুসলিম। তারপরও মৃত্যুর পর সামাজিক কবরস্থানে তাদের ঠাঁই হতো না। তাদের কারও পারিবারিক কবরস্থানও নেই। ফলে মৃত ব্যক্তিদের বাড়ির আঙিনায় কবর দেওয়া হতো।  

আজ বুধবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান এ সকল বেদে পরিবারের সদস্যদের কবর দেওয়ার জন্য ১৩ শতাংশ জমি হস্তান্তর করেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, গাজীপুর সিআইডির এএসপি এনায়েত করিম রাসেল, হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুঈদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গুলজার হোসেন বাচ্চু, গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক বিশ্বাস প্রমুখ।

 

কবরস্থানের জায়গা পেয়ে কমলা বিবির মতো খুশি বেদে পরিবারের সবাই। মমিন শানদার বলেন, বছরখানেক আগে তার প্রতিবেশী ঘোনাই বিবি মারা গেলে স্থানীয় কান্দালংকা কবরস্থানে দাফন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়। ঘোনাই বিবি বেদে সম্প্রদাযের হলেও বিয়ে করেন অন্য সম্প্রদায়ে। তারপরও তার সামাজিক কবরস্থানে জায়গা না হওয়ায় বাড়িতে দাফন করা হয়। এখন পুলিশের সহযোগিতায় কবরস্থানের জায়গা পেয়ে খুশি তারা। 

মুকুল শানদার জানান, ১৯৬৮ সালের দিকে ৮/১০টি বেদে পরিবার এ এলাকায় সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে বসবাস শুরু করেন। তখন তারা নৌকায় করে মেয়েদের প্রসাধনী, হাড়ি-পাতিল, কড়াই বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এখন এই ব্যবসায়  তেমন লাভ না থাকায় বিভিন্ন পেশায় ঝুঁকেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবনমানের কিছুটা উন্নয়ন ঘটলেও দীর্ঘ ৪২ বছরেও কবরস্থানে জায়গা হয়নি তাদের।  

জমি হস্তান্তরের সময় ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সমাজের মানুষেরা বেদে-শানদার জনগোষ্ঠীকে একটু ভিন্ন চোখে দেখে। তাদের কেউ মারা গেলে সামাজিক কবরস্থানে সচরাচর কবর দিতে দেয় না। এ কারণে তাদের পরিবারের সদস্যদের কবর দেওয়ার জন্য ১৩ শতাংশ জমি কিনে দেওয়া হয়েছে। 
 

চন্দন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়