ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তিনি ডাক্তার, তিনিই ঝাড়ুদার

ইকবাল গফুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০০:৩৪, ২৪ অক্টোবর ২০২০
তিনি ডাক্তার, তিনিই ঝাড়ুদার

টাঙ্গাইলের সখিপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিক্যাল অফিসার), উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়কসহ ৫টি পদ থাকলেও শুধু ১ জন ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।

সাইফুল আলম নামের ফার্মাসিস্ট প্রায় ২০ মাস ধরে ৫ জনের দায়িত্ব একাই পালন করছেন।  অসুখ-বিসুখেও একদিনও ছুটি নিতে পারেননি।  করোনার ভয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী কমে যাওয়ায় সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।  মিডওয়াইফ পদে কেউ না থাকায় প্রসূতি সেবা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।  এরপরেও প্রতিদিন ৬০-৭০ জন সাধারণ রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাইফুল আলমকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রতন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রেষণে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যোগ দেন। এর একমাস পর উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা গুলশান আরা প্রেষণে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যান।  প্রসূতি মায়েদের সেবাদানের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ পদে জ্যেষ্ঠ সেবিকা অঞ্জনা বালাও প্রায় দেড় বছর আগে প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে গেছেন।  মৃত্যুজনিত কারণে গত তিন বছর ধরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।  ফলে ২০ মাস ধরে ফার্মাসিস্ট সাইফুল আলম হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়াসহ একাই সব দায়িত্ব পালন করছেন।

সাইফুল আলম বলেন, আইন অনুসারে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফার্মাসিস্ট রোগীকে ওষুধ সরবরাহ করবেন।  রোগীকে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন।  স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বরাদ্দকৃত ওষুধ তার হেফাজতে সংরক্ষিত থাকবে।  রোগী দেখা বা রোগীর ব্যবস্থাপত্র লেখা তার এখতিয়ার বহির্ভূত।  হাসপাতাল ঝাড় দেওয়াও তার কাজ নয়।  অথচ তাকে এক সঙ্গে রোগীও দেখতে হচ্ছে, আলমারি খুলে ওষুধ দেওয়াসহ প্রতিদিন হাসপাতালের দুটি কক্ষ, বারান্দা ও চারপাশ ঝাড়ুও দিতে হচ্ছে।  তিনি কোনো ছুটিও নিতে পারছেন না।  প্রতিদিন তাকে ৫০ থেকে ৮০ জন রোগীকে সামাল দিতে হচ্ছে।

দেখা যায়, রোগীর সমস্যার কথা শুনে ওষুধ দিচ্ছেন সাইফুল।  তবে কোনো ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন না।  মুখে মুখে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বলে দিচ্ছেন।

সাইফুল আলম বলেন, মুখে নিয়ম বলে দেওয়ায় অনেক বয়স্ক রোগী বাড়িতে গিয়ে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম ভুলে যান।  অনেকেই পরের দিন আবার নিয়ম জানতে হাসপাতালে আসেন।  আইনত তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বলেন, দু'জন চিকিৎসক প্রেষণে চলে যাওয়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বর্তমানে নানা সমস্যা চলছে।  শিগগিরই সেখানে একজন চিকিৎসক দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়