ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এখনো বিলাপ করে কাঁদছেন জাকিরের বাবা মা

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০২০
এখনো বিলাপ করে কাঁদছেন জাকিরের বাবা মা

‘ওরে বাবা তুই কই গেলি।  আমারে তর কাছে নিয়া যা। তরে ছাড়া আমার দম বন্ধ অইয়া যাইতাছে। কোথায় গেলে তরে পামু রে বাবা।’

এভাবেই বিলাপ করছেন আর কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন ঢাকার নবাবগঞ্জে নিহত মোটরসাইকেল চালক জাকিরের বৃদ্ধ বাবা ও মা। এখনো গ্রেপ্তার হয়নি আসামি। হত্যার ২৬ দিন পার হলেও থামছে না জাকিরের বাবা মায়ের বিলাপ।  

গত ৩০ সেপ্টেম্বর  ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নে চর শৈল্যা গ্রামে ডেকে নিয়ে নেশা জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ জাকিরের পরিবারের। পরের দিন ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকির হোসেন। 

জাকিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

এঘটনায় ১০দিন পর ১০ অক্টোবর জাকিরের স্ত্রী পুরান তুইতালের মো. শফিক ও আফজালনগরের মো. জাকিরসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ঘটনার ২৬ দিন ও মামলার পর ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এখনো পাওয়া যায়নি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। 

পুলিশের দাবি আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে নিহত জাকিরের পরিবারের দাবি, একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সরেজমিনে মোটরসাইকেল চালক জাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুত্র হারানোর শোকে বৃদ্ধ বাবা মার চোখের পানি যেন থামছেই না।  পুত্র শোকে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারাও।  প্রতিদিনই নিয়ম করে সন্তানের কবর দেখতে ছুটে যান কবরস্থানে।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেন ছেলের কবরের সামনে। 

জাকিরের পিতা আবুল কালাম বলেন, ‘বাবার আগে ছেলের বিদায় বড়ই কষ্টের।  পৃথিবীতে এর চাইতে বড় শোক আর নেই। আমরা এখন জীবিত থাকতেও মৃত।  আমার ছেলে খুবই ভালো ছিল।  যেদিন আমার ছেলের জানাজা হয় সেদিন হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল।  সবাই আফসোস করেছে।  জাকির রাত বিরাতে সবার বিপদে ছুটে যেতো মোটরসাইকেল নিয়ে।’

আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আসামি শফিক ও জাকির আমার ছেলেকে বাসায় ডেকে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য সামগ্রী খাইয়ে মারধর করে শফিকের বসত বাড়িতে ফেলে রাখে। ওরাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।  কিন্ত এখনো কোনো আসামি ধরা পড়েনি।  আসামি জাকিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। হত্যা করেও ওরা প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না।’

নিহত জাকিরের স্ত্রী মুকসেদা বেগম বলেন, ‘আমি বিধবা হলাম, এতিম হলো আমার সন্তানরা। কিন্ত এখনো কোন আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ।  আমার স্বামী কেমন ছিল আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখেন। আমরা গরিব বলে কি হত্যার বিচার পাব না। আমার স্বামীকে শফিক ও জাকির ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। অথচ জাকিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা। ওর সাথে ওর পরিবারের অবশ্যই যোগাযোগ আছে। পুলিশ কি এসব দেখে না? আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই সরকারের কাছে।’

মামলার অন্যতম আসামি মো. জাকিরের পরিবারের দাবি, জাকির এলাকাতেই আছে। ব্যবসা করছে। মোটরসাইকেল চালক জাকির হত্যার সাথে জাকির জড়িত না, সুতরাং সে পলাতক থাকবে কেন? কিছুক্ষণ আগেও জাকির বাসায় ছিল বলে জানান জাকিরের বোন।

মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি শফিকের বোন শিল্পী বেগম বলেন, ‘সেদিন কি ঘটেছিল আমি জানি না। আমার ভাইয়ের ঘরের সামনে জাকির অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিল। তবে তার ভাই সেখানে ছিল না।’

মামলা সূত্রে জানা যায়, পুরান তুইতালের মো. রহিমের ছেলে শফিক (৪০) ও আফজাল নগরের মৃত শফি উদ্দিনের ছেলে মো. জাকির (৪২) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে নিহতের স্ত্রী মোকসেদা বেগম নবাবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে আসামি শফিক মোবাইল ফোনে জাকিরকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর জাকিরকে নেশা জাতীয় বিষাক্ত দ্রব্য পান করিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় বসত ঘরের সামনে ফেলে রাখে। বিকেলে শফিকের প্রতিবেশী সজীব তালুকদার নিহতের পিতা আবুল কালামকে শফিকের বাড়িতে ডেকে নেন। এসময় আবুল কালাম সন্তানকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য উপস্থিত জুয়েল মাস্টার ও মামলার আসামি জাকিরকে সাহায্যের জন্য অনেক অনুরোধ করেন। কিন্ত তারা সাহায্য না করে উল্টো নিহতের পিতাকে হুমকি ধামকি দিয়ে তার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর রাখেন। ১ অক্টোবর ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড)  চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকির মারা যান।

এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নবাবগঞ্জ থানার এসআই মৃত্যুঞ্জয় কুমার কির্তুনীয় বলেন, আসামিরা পলাতক রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব আশা করি।  এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি বলে জানান এ কর্মকর্তা।

শামীম/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়