ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হিমাগারে আলুর দাম কম, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী

শামীম কাদির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:০১, ২৬ অক্টোবর ২০২০

আলু উৎপাদনের জেলা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত জয়পুরহাট। এখানকার হিমাগারগুলোতে আলুর দাম কমলেও পাইকারি এবং খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে সরকার দফায় দফায় মূল‌্য নির্ধারণ করে দিলেও এখানকার বাজারগুলোতে কমছে না আলুর দাম।

গত বছরগুলোতে আলুর বাজার  স্থিতিশীল থাকলেও এবাবের চিত্র একেবারেই উল্টো। বর্তমানে জেলার বাজারগুলোতে মানভেদে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে  আলু বিক্রি হচ্ছে। এতো চড়া মূল‌্যে এর আগে কখনও আলু বিক্রি হয়নি এই জেলাতে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কৃষক, ব্যবাসায়ী ও হিমগার মালিকরা এর আগে আলুতে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছেন। বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবং অধিক লাভের আশায় এবার কারসাজি করে সিন্ডিকেট করেছেন আলু ব‌্যবসায়ীরা। এতে উচ্চ মূল‌্যে আলু বিক্রি করে মুনাফা করতে পারলেও বিপাকে পরেছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আলুর ক্রয়ক্ষমতা সল্প আয়ের মানুষদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় জেলা তথা দেশজুড়ে আলুর বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা মার্কেটিং বিভাগের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, জয়পুরহাটে গেল মৌসুমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। আর মৌসুমের শুরুতে ১ লাখ উনপঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার মোট ১৮টি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আলু। বর্তমানে (২৪-১০-২০ তারিখ পর্যন্ত) হিমাগারগুলোতে রক্ষিত আছে আরও প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আলু।

হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত এই ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আলুর মধ্যে আবার বীজ আলু রয়েছে ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এই পরিমাণ আলু হিমাগারে থাকার পরও আলুর বাজারে দরদাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। হিমগারগুলোতে পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা বেঁধে দিয়ে নোটিশ ঝুলানো হলেও গোপনে ৩০/৩৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা মূল্য আলুর জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দর বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের।

জয়পুরহাটের সাহেব বাজারে শান্তিনগরের আসলাম হোসেন জানান, আলুর এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে সিন্ডিকেটের কারণে। পর্যাপ্ত বাজার ও হিমাগার মনিটর করা হলে এই দাম কমে যাবে। কিন্তু এসব দেখবে কে?

পাঁচবিবি পৌর শহরের কাঁচা বাজারে চানপাড়া গ্রামের শাহারুল জানান, আলুর শহরে এতো দামে আলু বিক্রি কিছুতেই মানা যায় না। সাধারণ কৃষক এই দাম পাচ্ছে না। লাভ করছে ব‌্যবসায়ী ও হিমগারমালিকরা। কিন্তু দেখার কেউ নাই।

আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর বাজারে জাফরপুর গ্রামের মোফাজ্জলসহ জেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজার করতে আসা আরও অনেক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান,বিগত বছরগুলোতে এ সময় যেখানে সর্বোচ্চ ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে, সেখানে এবারে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হচ্ছে। তারপরও এই সহজ হিসেব যেন কোনো কাজেই আসছে না, আলু নিয়ে সবখানে চলছে হাহাকার অবস্থা। এর ধকল থেকে পরিত্রাণ পেতে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়ের দাবি এলাকাবাসীর।

অভিযোগ অস্বীকার করে জয়পরহাট শহরের নতুন হাটের আব্দুস সাত্তার, কালাই উপজেলার পুনট বাজারে সাহেব আলী, মজিবর রহমান, ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারে মিজানুর রহমানসহ অনেক আলু ব্যবসায়ী জানান, সিন্ডিকেট নয়, এবারে কম উৎপাদন, বিদেশে আলু রপ্তানি, করোনাকালীন অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আলু বিতরণ, সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে অন্যান্য শাক-সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে আলুর চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও সরবরাহ কম হওয়ায় আলু দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসবের পরও সরকারি নিদের্শনায় হিমাগারগুলোতে পাইকারি মূল্য কেজি প্রতি ২৭ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান  সংরক্ষণকারী, ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষগণ। 

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগারের প্রধান হিসাব রক্ষক রায়হান আলম, সালামিন হিমাগারের ব্যবস্থাপক রতন কুমার, পাঁচবিবি উপজেলার কুশুম্বা হিমাগারের ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান জিয়াসহ বিভিন্ন হিমাগারের কর্মকর্তারা জানান, আলু বিক্রি করেন সংরক্ষণকারী কৃষক  ও ব্যবসায়ীরা। তারপরও সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক আলু বিক্রির জন্য তারা হিমাগারের বিভিন্ন স্থানে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া ছাড়াও হিমাগারগুলো এলাকায় আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেফতাহুল বারী ও জেলা মার্কেটিং অফিসার রতন কুমার বাস্তবতা স্বীকার করে জানান, হিমাগারগুলোতে আলু কেনা ও সংরক্ষণসহ কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৪ টাকা, সেখানে সরকারি নির্দেশনায় আলু বিক্রি করা হলে সংরক্ষণকারীদের কোনো লোকসান হবে না।

জয়পুরহাট/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়