ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৫০ হাজার টাকা মূলধনে নারী উদ্যোক্তা বীণা ত্রিপুরার শুরু

নুরুচ্ছাফা মানিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ২৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৩:২৮, ২৬ অক্টোবর ২০২০
৫০ হাজার টাকা মূলধনে নারী উদ্যোক্তা বীণা ত্রিপুরার শুরু

বীণা রাণী ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি সদরের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। যুব উন্নয়ন থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ বছরে পরিবর্তন করেছেন নিজের ভাগ্যের। এখন তিনিই পথ দেখাচ্ছেন সমাজের অন্য নারীদের। 

এরই মধ্যে ২০১৮ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। সফল আত্মকর্মী নারী হিসেবে পেয়েছেন সম্মাননা। তবে শুরুর গল্পটা এতো সহজ ছিল না এই বীণা রাণী ত্রিপুরার।

কঠিন সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিচারণ করে বীণা ত্রিপুরা জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হয়। সংসার জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের মা।  তবে ১৬ বছর সংসার জীবনে যখন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় তখন অনেকটা শূন্য হাতে আসতে হয়। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামতে পারেননি। সমাজের নেতিবাচক চিন্তাধারার বিপরীতে জীবিকার সন্ধান করতে গিয়ে পদে পদে হয়েছিলেন হয়রানির শিকার। 

যখন চারদিকে অথৈ অন্ধকার তখন এক আত্মীয়ের পরামর্শে খাগড়াছড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গ্রহণ করেন সেলাই প্রশিক্ষণ।  ২০১৫ সালে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসত বাড়ির আঙিনায় মায়ের দেওয়া একটি ও পরিচিত এক দিদির (বোন) দেওয়া আরেকটিসহ দুইটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন কাজ। এলাকার অনেকে তার কাছে কাজ নিয়ে আসতে থাকেন। কিছু দিন পর পরিধি বাড়াতে গিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। স্বামী না থাকায় ঋণ দিতে চায়নি কোন প্রতিষ্ঠান। 

পরে খাগড়াছড়ি জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তৎকালীন একজন উপ-পরিচালকের সহযোগীতায় ৫০ হাজার টাকার ঋণ ব্যবস্থা হয়। যা দিয়ে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। আরো কয়েকটি মেশিন কিনে খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুর এলাকায় সরকারি জায়গার উপর একটি ঘর তুলে সেখানে গড়ে তুলেন হেমি ট্রেইলার্স ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পাশাপাশি অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে তোলেন থান কাপড়। এভাবে চলতে থাকে তার এ প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে বীণা ত্রিপুরার প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখছে ৩ জন নারী। তাদের মধ্যে জেলা সদরের ইসলামপুর এলাকার আঁখি আক্তার নামে একজন জানান, বাবা মায়ের অভাবের সংসারে সহযোগীতা করতে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।  খন মোটামুটি অনেক শেখা হয়েছে।  পুরোপুরি শিখতে পারলে এলাকায় একটি দোকান দেওয়ার ইচ্ছা তার।

পাঁচমাইল এলাকার কলেজ পড়ুয়া মত্ত রাণী ত্রিপুরা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মী হতে চান। তাকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বীণা রাণী ত্রিপুরা।

২০১৬ সাল থেকে ৩০ জনের মতো নারী বীণা রাণীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। 

বীণা ত্রিপুরা বলেন, সরকার যেখানে নারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের কথা বলছেন মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। একজন নারী যদি স্বামী পরিত্যক্তা হয় তবে তাকে কোন প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে চায় না। সমাজেও নানা রকম নেতিবাচক ধ্যান ধারণা রয়েছে নারীদের নিয়ে। এতো কিছুর পরও মায়ের সহযোগিতায় জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কতদিন এভাবে চলবে তার নিশ্চয়তা নেই। খাস জায়গার উপর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা পান তবে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থায়ীভাবে করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতি সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা পলিসির কথা বলে তারা নানা শর্ত দিচ্ছেন। যা অনেকের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এককভাবে কাউকে সহযোগীতার সুযোগ না থাকলেও সমিতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়