স্বপ্নের চিলমারী নৌবন্দর চালুর অপেক্ষায় কুড়িগ্রামবাসী
বাদশাহ্ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম
চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও শুরু হয়নি বন্দর উন্নয়নের কার্যক্রম।
স্থানীয়রা বলেন, স্বপ্নের চিলমারী নৌবন্দর চালুর অপেক্ষায় কুড়িগ্রামবাসী। বন্ধ হয়ে যাওয়া এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বন্দরটি চালু হলে সৃষ্টি হবে বিপুল কর্মসংস্থান। পাশাপাশি নদী পথে কম খরচে পণ্য পরিবহন করা গেলে লাভবান হবেন উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই জেলাকে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে নানামুখি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয়েছে সোনাহাট স্থলবন্দর। চিলমারী নৌবন্দরকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার মহাপরিকল্পনার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রথমে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদের সঙ্গে সংযুক্ত সব নদীর সঙ্গে এমনকি বঙ্গপোসাগরের সঙ্গে চ্যানেল বের করা হবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌবন্দরটি পুনরায় চালু করা হবে। এজন্য নৌ মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে। এখন টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে। টেন্ডার হয়ে গেলেই শুরু হবে নদের চ্যানেল ঠিক করে নৌবন্দর চালুর মহা কর্মযজ্ঞ।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিলমারী এক সময় একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এ স্থানটি অনেক আগে থেকেই ‘চিলমারী বন্দর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বন্দর দিয়ে হাজার হাজার মণ পাট, ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। ব্রিটিশ আমল থেকে কোলকাতা থেকে গৌহাটি ও আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ যাতায়াত ছিল। বন্দরটিকে ঘিরে চিলমারীতে গড়ে উঠেছিল বড় বড় পাটের, সরিষার, ধানের, গমের, বাদামের, তিসির ও ভুট্টার গোডাউন। দেশের নামিদামি পাট কোম্পানিগুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট কিনতো। এছাড়া, বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে নানা ধরনের মালামাল কেনার জন্য দিনের পর দিন অবস্থান করতেন।
২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারীর রমনা শ্যালোঘাট নামক স্থানে পল্টুন স্থাপন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বন্দরের উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু এরপর কাগজে-কলমে ছাড়া দৃশ্যমান কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রমনা স্যালোঘাটে কাজ করা শ্রমিক আবুল কাশেম জানান, আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগেও এই বন্দরে পাটবোঝাই, পণ্যবোঝাই জাহাজ ভিড়তো। তখনও আমরা এই বন্দরে শ্রমিকের কাজ করতাম। কিন্তু নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পণ্যবোঝাই জাহাজ আর ভিড়তে পারে না। ডুবো চরে আটকে যায়। এজন্য বন্দরটি প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
একই ঘাটের শ্রমিক খয়বর আলী (৬০), আবু তালেব (৫৮), শাহাজামাল (৪৫) বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই আমরা অপেক্ষায় আছি কখন বন্দরটি চালু হয়। বর্তমানে ঘাটে নৌকায় মোটরসাইকেল ওঠানো-নামানো আর দু’একটি বস্তা ছাড়া আর কোনো মালামাল ওঠানো-নামানো করতে পারছি না। বন্দর চালু হলে জাহাজ ভিড়বে। তখন আর কাজের অভাব হবে না। আমরা চাই, দ্রুত যেন এই বন্দর চালু হয়।’
কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ী মহসিন আলী বলেন, ‘চিলমারী নৌবন্দর চালু হলে এ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে। কেন না এখন সড়ক পথে বেশি টাকা খরচ যে সব মালামাল আনা-নেওয়া করা হচ্ছে তখন কম খরচে নদী পথে মালামাল আনা-নেওয়া করা যাবে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। পাশাপাশি ক্রেতারাও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবে।
চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী বীর বিক্রম বলেন, ‘চিলমারী নৌবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। আমার জানা মতে, বন্দর চালুর সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত ড্রেজিংসহ বন্দর চালুর দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হবে।’
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বন্দরটি উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত নদী ডেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। সঙ্গে নদী বন্দরের কার্যক্রমও শুরু হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর চালুর ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্দর এলাকার উন্নয়নে জেলা প্রশাসন থেকে নৌবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান ঘাট এলাকায় যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা ও একটি ভালো রেস্টুরেন্ট করার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম/ইভা
আরো পড়ুন