ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দুর্গাপুরের অনাথালয়ের শিশুদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে

দেবল চন্দ্র দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২১, ৩১ অক্টোবর ২০২০  
দুর্গাপুরের অনাথালয়ের শিশুদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের ’মানব কল্যাণকামী অনাথালয়’-এর শিশুদের।

দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের নাথপাড়া গ্রামের এই অনাথালয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ১২০ জন অনাথ শিশু। এরা সকলেই মা-বাবা হারা হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখান থেকেই তারা বড় হয়ে উঠছে।

ওরাওঁ, হাজং, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, সুইপার, মাহাতো, ত্রিপুরা, বুনোবসাক, কুমি, গারো, রাখাইন, কোচ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের অনাথ শিশু রয়েছে এখানে। ওদের মধ্যে ৬২জন প্রাইমারি স্কুলে, ৪০ জন হাইস্কুলে, ১৪ জন কলেজে এবং ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তাদের পড়ালেখাসহ যাবতীয় খরচ আশ্রম থেকেই বহন করা হয়।

যিনি এসব অনাথ শিশুদের দেখাশোনা করতেন তিনি চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন। এরপর থেকে অনাথ শিশুদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

প্রয়াত নিত্যানন্দ গোশ্বামী নয়ন এই অনাথালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৬ সালের ১১ মার্চ তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি থাকাকালীন সরকারি, বেসরকারী, সংস্থা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর নিকট থেকে আর্থিক অনুদান এনে অনাথ শিশুদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি না থাকায় অনাথালয়ের আর্থিক উৎস কমে যাচ্ছে।  এতে করে শিশুদের ভরণপোষণ চালিয়ে যেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে তার স্ত্রী নিশা দেবীর।

নিশা দেবী বলেন, ৩ একর ৩৭ শতাংশ জমির ওপর সারিবাঁধা কয়েকটি আধাপাকা ও টিনশেড ঘর, বাগান, পুকুর এবং খোলা মাঠ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। অনাথ নিবাস ছাড়াও এখানে আছে- বৃদ্ধ নিবাস, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের আশ্রয়কেন্দ্র এবং দাতব্য চিকিৎসালয়।

তিনি জানান, এখানে সপ্তাহের প্রতি শনিবারে ফ্রি হোমিও চিকিৎসা ক্যাম্প বসে। ডা. যোবায়ের হোসেন দুর্গাপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে এসে বিনা পারিশ্রমিকে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ রোগী হয় এখানে। প্রতি শীতে আশ্রমের পক্ষ থেকে এলাকার গরিবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রমজান মাসে ভিক্ষুকদের মাঝে ইফতার ও নতুন কাপড় বিতরণ, দুর্গাপূজাতেও গরিবদের মাঝে কাপড় বিতরণ করা হয়।

জানুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেওয়া হয় কম্বল এবং সাদাছড়ি। আশ্রমের শিশুদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি পশুপালন, মৎস্যচাষ, কম্পিউটার, সবজি চাষ, বৈদ্যুতিক কাজ, ডেকোরেশন, সাউন্ড সিস্টেম প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও জানালেন নিশা দেবী।

নিশা দেবী জানান, নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন মৃত্যুবরণ করায় অকুল সাগরে ভাসছে অনাথালয়ের শিশুরা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।  দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সদস্যদের চাঁদায় চলতো অনাথালয়টি। তার মৃত্যুর পর সেসব অর্থ না আসায় অনাথ শিশুদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন আশ্রম মাতা নিশা দেবী।

তিনি জানান, অনাথালয়ের নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নেই। প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।  সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি বছর মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। যা তাদের ভরণপোষণ করার জন্য একেবারেই নগণ্য।

ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম, ঢাকাস্থ দুর্গাপুর সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সাময়িকভাবে সহায়তা দিয়েছে।

বর্তমান দুরাবস্থায় নিশা দেবী অনাথালয়ের সহায়তা করার জন্য দেশের বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।  বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়ও অবগত আছেন। 

বিভিন্ন সময় সরকারি বরাদ্দ এলে সেখান থেকেই তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নেত্রকোনা/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়