ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেড়িবাঁধ অভাবে লক্ষাধিক মানুষের মানবেতর জীবন

শাহীন গোলদার,সাতক্ষীরা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ১ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:৪৪, ১ নভেম্বর ২০২০
বেড়িবাঁধ অভাবে লক্ষাধিক মানুষের মানবেতর জীবন

সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বানভাসী মানুষ গত কয়েক দিনের বর্ষণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দীর্ঘ ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় এ দুই ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন প্রতিনিয়ত।

আশাশুনি উপজেলা প্রতাপনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কোহিনুর ইসলাম ও স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, ভিটেমাটি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধের ওপর, আশ্রয় কেন্দ্রে, নৌকায় ও পানির ওপর টঙ ঘর বেঁধে কোনো মতে জীবনযাপন করছেন তারা।

স্থানীয় স্বাস্থ্য সহকারী সারাবান তহুরা জানান, এখানে নেই সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা। ভেসে গেছে টয়লেট ঘরগুলোও। ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া চুলকানিসহ পানিবাহিত নানা রোগ। তার ওপর খাওয়ার কষ্ট তো রয়েছেই।

এদিকে, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, নতুন করে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে ৯ নম্বর সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দন এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, সেখানে তার নেতৃত্বে শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আশাশুনি উপজেলা শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, তার ইউনিয়নের ২২টি গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। তার ওপর গত কয়েক দিনের বর্ষণে বানভাসী মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাওয়ার কষ্ট তো রয়েছেই, তার ওপর সুপেয় পানির কষ্ট, বাথরুমের কষ্ট, সব মিলিয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে বানভাসীরা।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ হাজরাখালী থেকে কোলা পর্যন্ত সাড়ে ৭ কি.মি. রিংবাঁধ দিয়ে কিছু কিছু এলাকায় পানি বন্ধ করেছেন। সকাল থেকে চলছে কলিমাখালী এলাকায় রিংবাঁধের কাজ।

আশাশুনি উপজেলা প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের মধ্যে ১৫টি গ্রাম, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২টি গ্রাম ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম এখনও পানিতে নিমজ্জিত।

তিনি আরও জানান, আগামী শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর মাস নাগাদ এসব এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার জানান, কয়েকটি স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানিবন্ধ করা হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে এতই গভীর হয়েছে যে সেখানে এখন বেড়িবাঁধ সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, ইতোমধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এর সুফল ভোগ করবে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। 

গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায়। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে চলে জোয়ার-ভাটা। কিছু কিছু এলাকায় রিং বাঁধ দিয়ে পানি বন্ধ করা হলেও গত এক সপ্তাহ আগে প্রবল জোয়ারের চাপে তা আবারও ভেঙে যায়।

শাহীন/এসএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়