মুরাদনগরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ: ৫ মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৫
কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কমেন্টের জের ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন, কোরবানপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে শানু মিয়া (৩৮), প্রয়াত আজিজ মিয়ার ছেলে এনু মিয়া (৪৮), প্রয়াত হাবিবুর রহমানের ছেলে হেলাল ভূইয়া (৫০), প্রয়াত আবদুল খালেকের ছেলে মো. এরশাদ (৪০) এবং বাবু মিয়া।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, নাশকতার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়। আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি জানান, এর মধ্যে একটি মামলায় ৯১ জন, দুই মামলায় যথাক্রমে ৮৪ ও ৮৭ জনকে নামীয় এবং সাড়ে পাঁচশত জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (৩১ অক্টোবর) কোরবানপুরের এক ব্যক্তির ফেসবুকে করা মন্তব্য নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় রোববার (১ নভেম্বর) সকালে পুলিশ অভিযুক্তসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। মামলার অন্য আসামিও মুরাদনগর উপজেলার ছেলে।
পুলিশ জানান, ওই ঘটনার রেশ ধরে রোববার বিকেলে কোরবানপুরের স্থানীয় একদল বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বনকুমার শিবের অফিস, মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাজ করেছে।
আজ সোমবার (২ নভেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এবং পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বিষয়টি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকে ঘটতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ঘটনার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন।
পরিদর্শন শেষে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনা দেখে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আমরা আপাতত বুঝতে পেরেছি- এটি ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটতে পারে। তবে তদন্তের পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘পুলিশকে বলা হয়েছে ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে। তবে, অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।’
অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের পরে রোববার রাতেই কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাস, সাবেক উপজলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুন আল রশিদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
ইমরুল/বকুল
আরো পড়ুন