ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ময়মনসিংহের খালগুলো

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:৫৮, ৬ নভেম্বর ২০২০
দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ময়মনসিংহের খালগুলো

দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে আকুয়া খাল

‘এক সময় এই খাল থেকে ছোট-বড় নানা ধরনের মাছ ধরতাম। স্বচ্ছ পানিতে এলাকার লোকজন গোসল করতো। আশপাশের মানুষ কাপড় ও বাসনপত্র ধোয়ার কাজও করতো। এখন আর সেই দিন নেই।’ 

আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের আকুয়া খাল পাড়ের বাসিন্দা ফজুল হক।

আকুয়া বাড়েরা এলাকার বাসিন্দা নেকবর আলী বলেন, ‘এই খালের অনেক জমি এখন দখল হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে দখল করছে। এছাড়া, শহরের ময়লা আবর্জনা এসে খালের পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে খাল খনন করছে। কিন্ত‚ বেদখল জায়গা তো উদ্ধার করা হচ্ছে না।’ 

আকুয়া খালের মতো একই অবস্থা নগরীর বগাবাড়ী, গোহাইলকান্দি, সেহড়া, কাটাখালী ও ছত্রপুর খালের।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নগরীর আকুয়া খালের জলাভূমির আয়তন ১৩.৮৫৮৯ একর, গড় গভীরতা ৮ ফুট। রয়েছে জরাজীর্ণ চারটি কালভার্ট। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মাকরজান খালের আয়তন ০.১৬৪০১ একর। গড় গভীরতা ৬ ফুট। কাগজ কলমে এসব তথ্য থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

খালগুলোতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। চলছে দখল। এসব জায়গা দখলের পর নির্মিত হয়েছে দোকানপাট ও বহুতল ভবন। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ২০০ খাল রয়েছে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, অন্যান্য এলাকাতেও দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে এসব খালের অধিকাংশই দিনে দিনে অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, গ্রামের খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা মাছ চাষ করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর বন‌্যার সময় ময়মনসিংহ জেলার প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন-যাপন করেছে।

গত সাত মাস আগে দখলদার উচ্ছেদ করার জন্য ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের যৌথ উদ্যোগে একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু সাত মাসেও কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে এলাকাবাসী জানান।

এই কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় সরকার উপপরিচালক এ কে এম গালিভ খান জানান, নগরীর খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের জন্য কমিটি গঠনের পরপরই মহামারি করোনা আসে। এ কারণে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি খালগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘ইতিমধ্যে নগরীর আকুয়া খাল খনন কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া, নগরীর সব খাল সংস্কারের জন্য একটি মাস্টার প্লান তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, খালের সম্পত্তি উদ্ধার ও দখলমুক্ত করতে একটি তালিকা করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জন উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে খালগুলো রক্ষা করতে হবে। খালগুলোর দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে গিয়ে প্রশাসন যেন অদৃশ্য ক্ষমতার কাছে হেরে না যায় সেই দাবি জানাচ্ছি।' 

ময়মনসিংহ/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়