ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

খুলনার ২২ খাল পুনরুদ্ধার অভিযান, ৩ ধাপে বাস্তবায়ন

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:১০, ৬ নভেম্বর ২০২০
খুলনার ২২ খাল পুনরুদ্ধার অভিযান, ৩ ধাপে বাস্তবায়ন

খুলনা মহানগরীর নিষ্কাশন সমস্যার বাধা হিসেবে চিহ্নিত ২২ খাল পুনরুদ্ধারে অভিযান বাস্তবায়ন করা হয়েছে তিনটি ধাপে।

তবে, করোনার শিথিলতার সুযোগে কেউ কেউ নতুন করে দখলের চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিক ‘ঝটিকা’ অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি)।

অপরদিকে, নগরীর লবণচরার গোড়ার খালের মুখ বন্ধ করে গড়ে ওঠা কেসিসি’র ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস এবং পশ্চিম টুটপাড়ায় খালের ওপর গড়ে ওঠা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়েও করণীয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সূত্র মতে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর গল্লামারীর পশ্চিম পার থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। টানা প্রায় ৫ মাসের অভিযানে ময়ূর নদী ও ২৬টি খালের ৪৬০ জন দখলদারের ৩৮২টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। উচ্ছেদ কার্যক্রমে ১ তলা থেকে ৫ তলা ভবনের পাশাপাশি পাকা-আধাপাকা বিভিন্ন ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়।

এর আগে কার্যক্রমটি সফল করতে ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটি এবং ২৫ সদস্যের উদ্ধার কমিটি গঠিত হয়। কারিগরি কমিটির প্রধান করা হয় খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং সদস্যসচিব কেসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা। উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক খুলনা জেলা প্রশাসক এবং সদস্যসচিব কেসিসির সচিব।

উচ্ছেদ কার্যক্রমের প্রথম ধাপে নগরীতে এক সপ্তাহ ধরে মাইকিং, দ্বিতীয় ধাপে পরিস্থিতি পর্যপেক্ষণ এবং তৃতীয় ধাপে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে চালানো হয় টানা উচ্ছেদ অভিযান।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, খুলনা মহানগরীর মধ্যকার ২২টি খাল নানাভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা তীব্রতর হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। যার সফল বাস্তবায়নে নগরীতে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমে এসেছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের সূত্র জানান, মহানগরী এলাকার ২২টি খালের মধ্যে সাহেবখালী খাল, বাটকেমারী খাল, ছড়িছড়া খাল, ময়ূর নদ, মন্দার খাল, হরিণটানা খাল, তালতলা খাল, তমিজ উদ্দিন খাল, মতিয়াখালী খাল, খুদে খাল, নারকেলবাড়িয়া খাল, ছোট বয়রা শ্মশানঘাট খাল ও মজুমদারের খাল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অবৈধভাবে দখল হয়ে যায়। এর মধ্যে সাহেবখালী খালের ওপর রূপসায় সিটি করপোরেশন মার্কেট তৈরি করেছে; আছে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়, লবণচরা গোড়ার খালের ওপর তৈরি হয়েছে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়। নবীনগর খালের ওপর তৈরি হয়েছে ট্রাক টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পিটিআই মোড়ে তৈরি হয়েছে ওয়ার্ড কার্যালয়। এর ফলে ২৩, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশিত হয় না। রেলওয়ে এলাকায় যে খালটি ছিল তার ওপর এখন হলুদ-মরিচের আড়ত। এছাড়া, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের পশ্চিমে তৈরি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কারণে একটি খালের মুখ বন্ধ হয়ে আছে।

এই সূত্র আরও  জানায়, ২০০৮-১৩ সালে নগরীর ২২টি খাল পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ ইকবাল বিথারকে প্রধান করে কমিটি গড়ে দখল উচ্ছেদ শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১১ জুলাই শহীদ ইকবাল বিথারকে দুর্বৃত্তরা খুন করে। এরপর বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধার অভিযান। মহানগরসহ আশপাশের খাল ও নদী বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে দুই পাড় দখল করা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের সড়ক ও ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে, পানি জমে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক। যে কারণে ময়ূর নদী ও ২৬টি খাল দখলমুক্ত করতে পূনরায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (সিডিপি) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব  জানান, দীর্ঘ দিন ধরে খুলনার ময়ূর নদীসহ আশাপাশের ২৬ খালের ওপর পর্যায়ক্রমে শতশত অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় শহরের বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষকে। তবে অনেক দেরিতে হলেও উচ্ছেদ অভিযান স্বস্তি দিয়েছে। কেউ কখনও চিন্তাও করেনি এভাবে ৫তলা ভবনও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের চেয়ারম্যান শেখ মো. নাসির উদ্দিন জানান, অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় আমরা খুশি।

কেসিসি’র সম্পত্তি শাখার প্রধান (এস্টেট অফিসার) মো. নূরুজ্জামান তালুকদার বৃহস্পতিবার রাইজিংবিডিকে বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করে নদী ও খাল দখল করে গড়ে ওঠা ৩৮২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে, কেউ কেউ নতুন করে দখলের চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিক ‘ঝটিকা’ অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করে সীমানা পিলার বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খালগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নগর সংলগ্ন আরও ৩৫টি খালের ওপর থেকেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়