ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নাটোরে নদী বাঁচাতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ

আরিফুল ইসলাম, নাটোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১১:৩৩, ৭ নভেম্বর ২০২০
নাটোরে নদী বাঁচাতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ

নাটোর জেলার নদ-নদীর দখল উচ্ছেদে অভিযান শুরু  হলেও পরে তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বরে এসব নদ-নদীর সংস্কার কাজের প্রথম ধাপ হিসেবে দখলদারদের চিহ্নিত করে স্থাপনা নিজ উদ্যোগে অপসারণ করতে ৩৯ জনকে নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এরপর ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর নাটোরসহ সারা দেশের নদ-নদীর দখল উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হয়। কিছুদিন পরে নাটোরে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারদ নদের পাড়ে দুই শতাধিক দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১১ জনের নোটিশ দেওয়া হয়। এছাড়াও দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বারনই, মূসা খাঁ ও গদাই নদী। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নদীগুলো দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা বাড়ি, এমনকি বহুতল মার্কেটও।

নাটোর জেলায় যে দুই-তিনটি নদী এখনও প্রবহমান নলডাঙ্গা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদী এর অন্যতম। তবে নানাভাবে দখল করা হচ্ছে নদীটি। দখলদারদের কারণে এই নদীর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল হক ও মোশারফ হোসেন জানান, প্রথমে অস্থায়ী পিলার গেড়ে শুরু হয় দখল প্রক্রিয়া। এরপর সেসব স্থানে গড়ে তোলা হয় অস্থায়ী বাসস্থান। এরপর ধীরে ধীরে স্থায়ী বাসস্থান, মার্কেটসহ বহুতল ভবন। এভাবে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে মরা খালে পরিণত হবে বারনই নদী।

২০১৬ সালে এই তীরে উচ্ছেদ অভিযানে কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর আর কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের। দখল প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। দখলদাররা মামলা করায় আইনি জটিলতায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানালেন নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, দখলদারদের তালিকা করে পুনরায় উচ্ছেদের অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

এছাড়া বড়াল নদী দখলকারী বাগাতিপাড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১৮ জন এবং নন্দকুজা নদীর জন্য গুরুদাসপুর উপজেলার ১০ জনকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থাপনা দখলদাররা স্বেচ্ছায় অপসারণ করে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তীরে গড়ে ওঠা  বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে ভরাট হয়ে নারদ নদ পরিণত হয়েছে সরু খালে। আর দুই তীর দখলের পর ভরাট করে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়েছে বড়াল ও নন্দকুজা নদী।

সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মোহনপুর, পীরগঞ্জ, কসবা, হাশিমপুর ও সাধুপাড়া গ্রামে নারদ নদে ছোট ছোট কালভার্ট রয়েছে। তবে এসব কালভার্টের কোনোটি দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। এছাড়া সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের লোটাবাড়িয়া গ্রামে নারদ নদে মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণ করেছে এলাকাবাসী।

নারদ নদে পানি প্রবেশের পথে রাজশাহীর চারঘাট স্লুইস গেট ছাড়াও ৩৫টি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে বাগাতিপাড়ার পকেটখালী এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের একটি সেতু ও পীরগাছা এলাকায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের একটি ক্রসওয়াল (নদীবেষ্টনি বাঁধ) অন্যতম। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পানি প্রবাহে বড় প্রতিবন্ধকতা এসব স্থাপনা অপসারণ না করলে নারদ নদী বাঁচানো যাবে না। 

নদী বাঁচাও আন্দোলন নাটোর জেলার সভাপতি প্রভাষক ফরাজী আহমেদ রফিক বাবন বলেন, ‘দেরিতে হলেও প্রশাসন নদীগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। নদীর সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত করে নদীগুলো চিরচেনা রুপে ফিরিয়ে দিলে কৃষকরা উপকৃত হতো। কিন্তু কী কারণে চলমান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলো জানি না।’ 

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, নদ-নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিতে নদী কমিশন, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনগণসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পরই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দখল উচ্ছেদের পর আগামী শুষ্ক মৌসুম থেকে সংস্কার কাজ পুরোদমে শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। 

নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নদ-নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রশাসনকে কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে যারা ভুমিহীন দখলদার, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনকে জমি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। তাদের বাসস্থানের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।

ঢাকা/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়