ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে পিআইও’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৮ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৫:২৬, ৯ নভেম্বর ২০২০
কিশোরগঞ্জে পিআইও’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

কাউছার আহমেদ

কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাউছার আহমেদের বিরুদ্ধে সিডিউল বিক্রির ১৯ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ন-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে গত ৫ অক্টোবর চিঠি পাঠান। সেখানে তিনি পিআইও কাউছার আহমেদের বদলীসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন। 

এদিকে, সিডিউলের টাকা জমা না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে গত ১৮ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে কাউছার আহমেদকে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ২২টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ২৩ জুন। আর এসব কাজের জন‌্য ৯৫৯টি শিডিউল বিক্রি করে আয় হয় ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী সেই টাকা সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরকারি তহবিলে জমা দিতে হয়। অথচ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা সরকারি কোষাগারে জমে পড়েনি। এই টাকা নিজের কাছে রেখে অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন বলেন, ‘শিডিউল বিক্রির ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা না দেওয়ায় পিআইও কাউছারকে কারণ দর্শানোর যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সে ব‌্যাপারে আমি জানতাম না। তবে বিষয়টি জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি বলে আমার কাছে স্বীকার করেছেন।’ 

পিআইও কাউছার আহমেদকে শনিবার (৭ নভেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে তিনটি কিস্তিতে সিডিউল বিক্রির ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি।’ কিন্তু কোনো তারিখে কত টাকা জমা দিয়েছেন- এ প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। বরং বলেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার, আমাকে টাকার ব‌্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না।’ 

পরে সুনির্দিষ্ট তথ‌্য তুলে ধরা হলে কাউছার আহমেদ সব অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সিডিউল বিক্রির সমস্ত টাকা ব‌্যক্তিগত কারণে সরকারি তহবিলে জমা দিতে পারিনি। তবে খুব দ্রুততম সময়ের মধ‌্যে জমা দিয়ে দেবো।’ অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নোটিশের জবাবও তিনি ১৫ কর্মদিবসের মধ‌্যে দেবেন বলে জানান। 

অন্যদিকে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সদর উপজেলায় মারিয়া ও বিন্নাটি ইউনিয়নের দুই স্থানে মাটি ভরাটের জন‌্য ১৮ মেট্রিন টন গম/চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব‌্যক্তি এবং পিআইও কাউছার আহমেদ মিলে তা লুটপাট করার অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি তদন্তে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম‌্যাজিস্ট্রেট (বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন জেলা প্রশাসক। 

এ ব‌্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক অভিযুক্ত পিআইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠান। 

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, পিআইও কাউছার আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। সেখানে প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে শিডিউল বিক্রির টাকা জমা না দেওয়ার অভিযোগ তিনি পাননি। পেলে এরও তদন্ত করা হবে।

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়