ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভূতিয়ার বিলের বুকে এক টুকরা উর্বর উদ্যান

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:৪১, ১০ নভেম্বর ২০২০
ভূতিয়ার বিলের বুকে এক টুকরা উর্বর উদ্যান

ভূতিয়ার বিলে পানির ওপরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন মৌসুমী সবজি

খুলনার তেরখাদা উপজেলার সর্ববৃহৎ পতিত জলাভূমি ভূতিয়ার বিল উপজেলাবাসীর জন্য এক নিরব কান্না। জলাবদ্ধতায় দীর্ঘ দিন পতিত থাকায় হতাশ ভূমি মালিকরা। বিশাল জমির মালিকানা থাকলেও তারা কোনো কাজে লাগাতে পারেন না।

এদিকে, বিগত তিন বছর বিশাল ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে দুই বিঘা জমিতে পানির ওপরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন মৌসুমী  সবজি। ভাসমান এ সবজি চাষে সাফল্যের হাসি হাসছেন কৃষকরা।  ভূতিয়ার বিলের বুকে দুই বিঘা জমি যেনো এক টুকরা উর্বর উদ্যানে পরিণত হয়েছে।

দীর্ঘ দিন পতিত বিশাল এ জলাভূমিতে এখন সবজির সমারোহ। সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত পরিবেশে ভাসমান বেডে লতা বিহীন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় দিনের পর দিন এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাসমান বেডে চাষাবাদ হচ্ছে- লালশাক, ওলকপি, উচ্চে, শসা, ধুনিয়া, ঢেঁড়শ, রসুন, পেঁয়াজ, আলুসহ অন্যান্য শাক-সবজি। গেল দু’বছরের চেয়ে এবার বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

ভাসমান সবজি চাষি হরিশ বিশ্বাস বলেন, ‘বসত বাড়ি ছাড়া আমার আর  কোনো জায়গা-জমি নেই। তাই ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে ভাসমান সবজি চাষ করে আমি এখন ভালো আছি। ছেলে-মেয়ের পড়া-লেখা, নতুন করে ঘর নির্মাণ ও দৈনন্দিন সকল খরচ নির্বাহের একমাত্র উৎস আমার ভাসমান সবজি ক্ষেত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এখনকার সবজি নিয়ে গেলে মানুষ আগেই এইটা কিনে নেয়। সকলেই জানেন- এখানের সবজি বিষমুক্ত। পাইকাররাও আমাদের কাছ থেকে শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেখা-দেখি অন্যরাও এখন ভূতিয়ার বিলে ভাসমান সবজি চাষাবাদ শুরু করেছে। সকলেই লাভবান হচ্ছি। একটা সময় তো এ বিলে কিচ্ছু হতো না।’

একই বিলের কৃষক নিখিল সরকার, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, উষা মজুমদার, অধির মজুমদার ও রমেন সরকার জানান, বর্তমান বাজারমূল্য ভালো থাকায় ভাসমান সবজি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে ভূতিয়ার বিলে তাদের জমি নেই। এখানে সবজি চাষাবাদের ফলে ভূমি মালিকরা খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, সবজি চাষাবাদে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাতে-কলমে কৃষকদের বেডে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি বেডে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসছেন ভাসমান সবজি চাষে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে কৃষকরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করতে পারছে। উপ-পরিচালক বলেন, একটি বেড তৈরিতে যে সকল জিনিস প্রয়োজন সেগুলো আমরা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এগুলো সহজে পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আয়তনের ভূতিয়ার বিলে শরৎকালে পদ্মফুল দেখতে ভিড় করেন সৌন্দর্য্য পিপাসুরা। ফলে এ বিলটি এখন ‘পদ্মবিল’ নামেও পরিচিতি পেয়েছে।

খুলনা/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়